ছোট্ট শিশু জায়ান। বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখতে গিয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হলেও রাজনীতির আগুনের আঁচ তার দেখা ছিল না। বৈশ্বিক রাজনীতির প্যাঁচের সাথে ন্যূনতম সম্পর্কও তার হয়নি। ধর্ম বর্ণ রাষ্ট্র নিয়ে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কিভাবে হয় তাও তার জানা হয়নি। সেই ভেদাভেদের আগুনে পুড়েই শেষ হয়ে যেতে হলে নিষ্পাপ শিশু জায়ানকে। হাসপাতালে এখনও ভর্তি তারা বাবা মশিউল হক চৌধুরী।
রোববার শ্রীলংকায় বোমা হামলায় নিহত আট বছরের জায়ানের মরদেহ বহনকারী শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের বিমান ইউএল-১৮৯ ফ্লাইটটি বুধবার দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের টারমার্কে নাতি জায়ানের মরদেহ গ্রহণ করেন নানা শেখ সেলিম। জায়ানের মরদেহ শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় নেওয়া হয়েছে। বুধবার আসরের নামাজের পর বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।
সপরিবারে শ্রীলংকা বেড়াতে গিয়ে রোববার ভয়ঙ্কর বোমা হামলায় অন্য অনেকের সঙ্গে নিহত হয় সাড়ে আট বছর বয়সী শিশু জায়ান চৌধুরী। এ ঘটনায় তার বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স আহত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাবা-ছেলে সেখানকার সাংগ্রি লা হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা করতে গিয়ে বোমা হামলার শিকার হন।
সে সময় হোটেল কক্ষে থাকায় বেঁচে গেছেন জায়ানের মা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া ও ছোট ভাই দেড় বছর বয়সী জোহান চৌধুরী। জায়ান রাজধানীর উত্তরার সানবিম ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কেজি-২ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
গুরুতর আহত জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সকে এখনই দেশে ফেরানো যাচ্ছে না। তিনি কলম্বোর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বামীর পাশে থাকায় ছেলের মরদেহের সঙ্গে দেশে ফেরা হচ্ছে না জায়ানের মা এবং শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়ারও।
জায়ানের অকাল মৃত্যুতে তার নানা শেখ সেলিমের বনানীর ২/এ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়িটিতে চলছে মাতম। জন্মের পর থেকে এই বাড়িতেই নানা-নানি, মামা ও মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে থাকত জায়ান। ছোট্ট শিশুটিকে হারিয়ে তাই শোক কাটাতে পারছেন না স্বজনদের কেউই।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই বাসাটিতে ছুটে এসেছেন স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাতে।