বাংলার মাটিতে বিএনপির কোনো শিকড় নেই : প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি কোনো দল ভাঙার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কোনো দল ভাঙা বা অন্য কিছু করার নীতিতে যাব কেন? যার যার দল সেই করুক। আওয়ামী লীগে অনেক লোকবল ও জনসমর্থন রয়েছে, অন্যের ভার নিতে যাব কেন? আসলে ক্ষমতা ছাড়া তারা (বিএনপি) রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারে না, কারণ বাংলার মাটিতে তাদের কোন শিকড় নেই।

আজ শুক্রবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, স্বেচ্ছায় ও ভোটারদের চাপে বিরোধী দলগুলোর এমপিরা শপথ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই। অনেক প্রস্তাব আসলেও আওয়ামী লীগ বিশেষ করে আমি দল ভাঙ্গার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। লিখিত বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

universel cardiac hospital

সাম্প্রতিক ব্রুনেই সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, অর্থনীতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, সাংগঠনিক বিষয় ছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন ইস্যুতে করা প্রশ্নের স্বভাবসুলভ হাসিতে বিস্তারিত উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। জনগণের চাপ আছে তাদের ওপর। আর বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল। অন্য কোনো দল থেকে তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি এই নৃশংস হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে শোকবার্তা পাঠাই। এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনমত সৃষ্টি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

২০১৬ সালে জুলাইয়ে ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সেই হোলি আর্টিজানের পর থেকেই আমরা নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছি। কিন্তু তারপরেও সন্দেহ অবশ্যই আছে। সবসময় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিচ্ছি বলেই হয়তো এখানে খুব একটা সুযোগ পাচ্ছে না।

বাংলাদেশে ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ লেগেই আছে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যাসহ বিভিন্ন সময়ে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হত্যার যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যা, সামরিক অভ্যুত্থান, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথাও তিনি তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অনবরত এ ধরনের সন্ত্রাস হচ্ছে এবং আমরা তার শিকার। সন্ত্রাসের ঝুঁকিতো আছেই। তবে এটুকু বলতে পারি যে, আমরা যথেষ্ঠ সজাগ আছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে।’

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে সরকার সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি জানি এটা শুধু গোয়েন্দা সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। সবাইকে নিয়ে করতে হবে। এজন্যই আমি দেশবাসীকে আহ্বান করেছি যে, একটা জনমত সৃষ্টি করা।

নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, মানুষকে হত্যা করে সেই ছবি ফেইসবুকে দিচ্ছে। কত বীভৎস ঘটনা। আমি সবসময়ই বলে আসছি। জঙ্গিবাদে যারা জড়িত তাদের কোনো ধর্ম নাই, দেশও নাই, তাদের কিছু নাই।

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকেও ‘অগ্নি সন্ত্রাসের’ শিকার হতে হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটুকু বলব, কেউ অন্যায় করলে সে যেই হোক না কেন, যে দলেরই হোক, তার কোনো ক্ষমা নেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নুসরাতের বিষয়টা যদি তাৎক্ষণিকভাবে না ধরতাম, তাহলে সব দোষ নুসরাতের ওপরই পড়ত। তাকে চরিত্রহীন বানিয়ে ছেড়ে দিত। সে কারণেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। আর এ ধরনের অন্যায় কখনো মেনে নেওয়া যায় না।

নিপীড়কদের হুঁশিয়ার করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনা যারাই ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব- সে যেই হোক। কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। আমার দল, কার দল কোনোটা আমি দেখতে চাই না।

আগামী কাউন্সিল এবং দলের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, অবসর নেয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কে আসবেন, এটা দলই সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে আমি কাউকে নির্ধারণ করে দিতে পারি না। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দেশের জনগণ ও দলই ঠিক করবে কে হবেন তাদের পরবর্তী নেতা। আর দেশের মধ্যে একমাত্র আওয়ামী লীগই পরিপূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র মেনেই দলকে পরিচালনা করে। আমি ইচ্ছা করলেই সব কিছু করতে পারি না, যা অন্য দলগুলোতে হয় এবং করে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনীতিক দল, জনমানুষের দল। দলের একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে, সে অনুযায়ী-ই দল পরিচালিত হয়। আগে প্রতিবছরই সম্মেলন হতো। কিন্তু এখন তা সম্ভব হয় না। কারণ খরচাপাতিসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে দেশজুড়ে তৃণমূলে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সম্মেলন হবে। এরই মধ্যে আটটি টিম করে দিয়েছি- তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেও ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছি। ইতিমধ্যে টিমও তৈরি করে দিয়েছি। দলের সবই ডিজিটাইলজড করে দেয়া হচ্ছে। সারাদেশের কমিটিগুলো একটি এ্যাপে নিয়ে আসা হবে। প্রয়োজনে গোপালগঞ্জে বসেই সব দেখতে পারব। এই কাজটি হলে সবই একজায়গায় বসে এক ক্লিকেই সব জানা সম্ভব হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে মিয়ানমারে নির্যাতিন রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং চূক্তিও হয়েছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদেরও স্পষ্ট করে বলেছি, যদি কিছু করতে চান মিয়ানমারের মাটিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাসহ সবকিছু করুন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যদি কোন ক্ষতি হয় তবে তাদেরও তো কিছু দায় নিতে হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে এ সময় মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু উপস্থিত ছিলেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা ছাড়াও সরকারের মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয়-সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে