শপথ নিচ্ছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত আরও ৪ জনপ্রতিনিধি

ডেস্ক রিপোর্ট

বিএনপি একাদশ সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শপথ নিচ্ছেন দলটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। দলীয় সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান শপথ নিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এখনও ‍কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তার পথ অনুসরণ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি চার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও শপথ নিচ্ছেন। বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আটজন নির্বাচিত হন। এর মধ্যে গণফোরামের দু’জন নির্বাচিত হন। ছয়জন নির্বাচিত হন বিএনপির টিকিটে। এই আটজনের মধ্যে সাতজনই ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হন। একমাত্র গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান নির্বাচিত হন দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য প্রতীকে। তবে তিনি দলীয় ভোটে নয়, বিএনপির ভোটব্যাংক কাজে লাগিয়েই সিলেট-২ আসন থেকে জয়ী হয়েছেন।

৩০ ডিসেম্বরের ভোটের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সর্বোতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, নির্বাচিত আটজনের কেউ-ই একাদশ সংসদে শপথ নেবে না। শপথ নিলে বহিষ্কার করা হবে।বিএনপি শুরু থেকেই বলে আসছে ৩০ ডিসেম্বর কোনো ভোট-ই হয়নি। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় এই সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

জাতীয় ঐকফ্রন্টের অঙ্গীকার সর্বপ্রথম ভঙ্গ করেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তিনি শপথ নেয়ার পরপরই তাকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর শপথ নেন মোকাব্বির খান, তাকে এখনও বহিষ্কার করা না হলেও শোকজ করা হয়েছে। আজ গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে।

এই দু’জন শপথ নেয়ার পর বিএনপি গণফোরামের ওপর বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছিল। সেই সঙ্গে দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠকে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি শপথ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এসব তোয়াক্কা না করে শপথ নিয়েছেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদ ভবনে তার দফতরে জাহিদকে শপথবাক্য পাঠ করান।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়া বাকি চারজনই শপথ নিতে পারেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তারসহ চারজন। এ ব্যাপারে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারের কার্যালয়ে যোগাযোগও করেছেন। যদিও এ বিষয়ে তারা মুখ খুলতে নারাজ।

এদিকে জাহিদ শপথ নেয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে দলটির হাইকমান্ড। শপথের পরপরই নির্বাচিত এমপিদের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে বৈঠক ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেবে জেলা কমিটি। পরে তা কেন্দ্র পাঠালে অনুমোদন করবে হাইকমান্ড। তবে জরুরি ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ড তাৎক্ষণিকভাবে যে কাউকে বহিষ্কার করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ শপথ নিলে তা ‘সাংগঠনিক অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনায় এনে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- শপথগ্রহণ না করা। এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে যদি কেউ শপথগ্রহণ করে থাকেন তা নিঃসন্দেহে সাংগঠনিক অপরাধ। অবশ্যই এ রকম ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুতই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র জানায়, ৩০ এপিলের মধ্যেই বিএনপি থেকে নির্বাচিত আরও কয়েকজন সদস্য শপথ নিতে পারেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে তারা স্পিকারের কার্যালয়ে যোগাযোগও করেছেন। শপথ এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে তারা অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বগুড়া-৪ থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি এখনও দলীয় সিদ্ধান্তে অনড় আছি। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেখানেই থাকব। তবে দলের রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। দেখা গেছে ১০ মিনিট আগেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন আসতে পারে। তাকিয়ে আছি, দেখি কী হয়। দলের বাইরে তো কিছু করার নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এর সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, এখনও সময় আছে। দেখা যাক কী হয়। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার বলেন, জনগণ যারা ভোট দিয়েছেন তাদের চাপ আছে। তবে দলের যে সিদ্ধান্ত তা দেখবেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সময় বেশি নেই। তবে আমি এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।

এই চারজন ছাড়া বগুড়া থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শপথ নেবেন না বলে স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে জাহিদ শপথ নেয়ায় নড়েচড়ে বসেছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নেয়ায় তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি উঠেছে। তার নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীরাও জাহিদের কর্মকাণ্ডে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। দ্রুত বসে তার ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে- আমরা সংসদে যাব না। দলের সিদ্ধান্ত যিনি অমান্য করবেন তিনি দলের ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন না। দলের সিদ্ধান্ত, দলের আদর্শ এবং নেত্রীকে জেলখানায় রেখে কেউ যদি শপথ নিয়ে থাকে এবং ভবিষ্যতে নেয় তারা জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে চলার যোগ্যতা রাখে না। তারা হল গণদুশমন। জনগণই তাদের বিচার সময়মতো করবে এবং সেটার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জাহিদুর রহমানের শপথের বিষয়টি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং দল এটা দেখবে। সাংগঠনিকভাবে যা ব্যবস্থা নেয়ার, তাই করা হবে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচিতরা দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন। একজন ব্যক্তি যদি দলের সিদ্ধান্ত না মানেন, তখন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক যে নিয়ম আছে, তা কার্যকর করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. তৈমুর রহমান বলেন, জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দু-একদিনের মধ্যে বৈঠক ডাকা হবে। বৈঠকে তাকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে। জাহিদুর রহমান জেলা কমিটির সহসভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলার সভাপতি পদে আছেন বলে জানান জেলা সভাপতি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে