‘আমরা সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই যেখানে ধনী দরিদ্রের কোন বৈষম্য থাকবে না এবং জনগণ মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করে নিজেরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারবেন’
দেশে বিচারের বাণী যেন নীরবে নিভৃতে না কাঁদে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো বিচারপ্রার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৮ এপ্রিল (রোববার) সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল এ দিবসটি পালন করে আসছে সরকার। অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সকলের জন্য ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করাই এর লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশে ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যেমন বিচারকদের তেমনি আইন পেশার সঙ্গে জড়িতদেরও।
মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় প্রদানের উপায় বের করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংগ্রাম এবং ত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি। গণতন্ত্র না থাকলে আইনের শাসন যেমন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় না, তেমনি আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্র টেকসই হয় না। আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, দেশে এখন জমি জমা সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাই বেশি। এগুলো আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা গেলে মামলা জট কমবে।
গুরুতর ফৌজদারী অপরাধ যেমন খুন ধর্ষণ ইত্যাদি আদালতের উপর ছেড়ে দিতে হবে এমন নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে।
তিনি বলেন, আমরা সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই যেখানে ধনী দরিদ্রের কোন বৈষম্য থাকবে না এবং জনগণ মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করে নিজেরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারবেন।
সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম বৈষম্য দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তৃনমূল পর্যায়ে এ কার্যক্রমের বিস্তার ঘটিয়ে এটিকে একটি স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে আমি দেশি বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দাতা গোষ্ঠী, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের সাংবিধানিক অধিকারগুলো তুলে ধরে বলেন, ন্যয় বিচারে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০১০’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে এ আইন ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মামলার জট রয়েছে যার নিরসনে জেলা লিগাল এইড অফিস স্থাপনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। টোলফ্রি জাতীয় হেল্প লাইন চালুর করে মানুষকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আইনি সেবার পরিকল্পনার সময় বিরোধের ধরন ও উৎস বিবেচনা করতে হবে। এ লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপরও জোর দেন আইনমন্ত্রী।