‘২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়া বেশিরভাগ শিশুর বয়স ৭ থেকে ১২ বছর। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা বেশি হন যৌন নির্যাতনের শিকার। বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষকের হাতে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে’
একের পর এক ঘটছে ধর্ষণ-নির্যাতন। নতুন উপসর্গ নৃসংসতা। নারীর প্রতি মাত্রা ছাড়া নির্মমতায় হতবাক বিবেকবান মানুষ। দেশে শিশুদের প্রতি সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
২০১৮ সালে সারাদেশে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, হত্যা ও শারীরিক নির্যাতনের কারণে মারা গেছে ২৭১টি শিশু। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১০০৬ জন।
রোববার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, হত্যা ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হওয়া শিশুদের সংখ্যা উল্লেখ করে দেয়া পরিসংখ্যান জানিয়ে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
প্রতিষ্ঠানটির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন শিশু নির্যাতনের একটি চিত্র তুলে ধরে জানান, ২০১৮ সালে ৪৩৩টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছে ২২টি শিশু। যৌন নির্যাতনের ফলে মারা গেছে একজন। এ ছাড়াও ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল ৫৩টি শিশুর ওপর।
দেশে প্রকাশিত ছয়টি সংবাদপত্রে উল্লেখিত সংবাদ থেকে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়া বেশিরভাগ শিশুর বয়স ৭ থেকে ১২ বছর। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা বেশি হন যৌন নির্যাতনের শিকার। বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষকের হাতে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ১২৯ জন। এদের মধ্যে ১৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
গতবছরে শিশুদের বিষয়ে এক হাজার ৩৭টি ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। অন্যদিকে, নেতিবাচক ঘটনায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দুই হাজার ৯৭৩টি, যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ শিশুর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৮১১ জন।
‘শাস্তির দিকে মনোযোগ না দিয়ে, সংশোধনে মনোযোগ দেয়া জরুরি। নাহলে এই সমস্যা আরো প্রকট হবে। সঙ্গে এসব ঘটনার বিচার এমন ভাবে করতে হবে যেন আর কেউ শিশুদের প্রতি অপরাধ করতে উৎসাহিত না হয়।’
রাফিজা শাহীন বলেন, আমাদের দেশে শিশুদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে সেটি আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। আমরা কেন শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাস গড়তে পারছি না সেটি নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এখনই করণীয় নির্ণয় করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহনাজ হুদা বলেন, ২০১১ সাল থেকে আমারা এই প্রতিবেদনগুলো সংগ্রহ করছি। শুরুতে আমাদের ধারণা ছিল এতে করে শিশুদের প্রতি সহিংসতা কমবে। কিন্তু হচ্ছে এর উল্টো। মূলত বিচারহীনতার জনই এমনটা হচ্ছে। শাস্তির দিকে মনোযোগ না দিয়ে, সংশোধনে মনোযোগ দেয়া জরুরি। নাহলে এই সমস্যা আরো প্রকট হবে। সঙ্গে এসব ঘটনার বিচার এমন ভাবে করতে হবে যেন আর কেউ শিশুদের প্রতি অপরাধ করতে উৎসাহিত না হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রনি চাকমা বলেন, যারা অপরাধী তাদের উপরও একটি স্টাডি করা জরুরি। কেন তারা শিশুদের রেপ করবে? এমন চিন্তা মাথায় আসে কীভাবে সেটি খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। দ্রুততম সময়ে এটি বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া, আইনি সীমাবদ্ধতা, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, লোকলজ্জা এবং পুলিশ ও সমাজের প্রভাবশালীদের অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে বিচার প্রার্থীরা আইনের আশ্রয় নেয়ার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।