উবারের মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যাওয়ার সময় বেপরোয়া গতির কাভার্ড ভ্যানচাপায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহতের ঘটনায় উবার কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে।
রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, উবারের মোটরসাইকেল চালক সুমন যাত্রী ফাহমিদাকে নিয়ে বেপরোয়া গতিতে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন এবং অসৎ উদ্দেশে বারবার ব্রেক করছিলেন। দুর্ঘটনার পর দায় এড়াতে মোবাইল ফোন বন্ধ করে সুমন পালিয়ে যান। পরে চালককে খুঁজে পেতে উবার কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য চাওয়া হলে তারা কোনো সহযোগিতা করেনি।
এছাড়া চালক সুমন উবারে রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন। উবারের এসব গাফিলতির কারণে সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। ঘটনার বিস্তর তদন্তে যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
শনিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকার আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকা থেকে কাভার্ডভ্যানসহ চালক আনিসুর রহমানকে আটক করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের একটি দল। আনিসুরের বাড়ি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আশিনপাড়ায়।
এর আগে শুক্রবার রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মোটরবাইকচালক সুমনকে মোহাম্মদপুর থেকে আটক করে পুলিশ।
গত সপ্তাহে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মোটরবাইক থেকে পড়ে নিহত হন ২১ বছর বয়সী লাবণ্য। তিনি বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ইমদাদুল হকের মেয়ে। দুর্ঘটনার দিন তিনি রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, লাবণ্যের মৃত্যুর পর আমরা প্রথম সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো একটি ক্যামেরায় কাভার্ডভ্যানটি ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছিল না। তবে আমরা তথ্য প্রমাণে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, লাবণ্যকে চাপা দেয়া কাভার্ডভ্যানটি পরিস্থিতি বুঝে রুট পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রের সামনে দিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় চলে যায়।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসি টিভি ক্যামেরায় আমরা ওই কাভার্ড ভ্যানটি শনাক্ত করি। রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিশ্চিত হতে না পারলেও কাভার্ডভ্যানের পেছনে লেখা ছিল ইনফোফোর্ট (Info Fort)। এরপর আমরা প্রথমে তেজগাঁও ইনফোভোর্টের সাব অফিসে খোঁজ করি।
এরপর মূল হেড অফিস আশুলিয়া বাইশমাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে গ্রেফতার করা হয়। উবার মোটরসাইকেল চালক সুমন ও কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঘটনার সময় বেপরোয়া গতিতে চলছিল মোটরসাইকেলটি। অন্যদিকে পেছনে থাকা কাভার্ডভ্যানটিও চালক আনিসুর আরো বেশি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আসছিল।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘হাসপাতালে উবারের বাইকচালক সুমন যে ঠিকানা দিয়েছিলেন সেই ঠিকানা ভুয়া। এমনকি তার নম্বরটি দিয়ে যে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে সেটাও ভুয়া। এসব ঠিকানায় তাকে পাওয়া যায়নি। উবারে রেজিস্ট্রেশনের জন্য সুমন যে ঠিকানা দিয়েছেন তাও ভুয়া। তাই তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি।
উবারে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে রাইডার নিবন্ধন করে সড়কে বাইক চালানোর অনুমতি পায়। এটা দেখার কেউ নেই। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো কোনও যাচাই বাছাই ছাড়াই চালকদের অনুমতি দিচ্ছে। এসব চালক দক্ষ না, মাদকসেবী কেউ কেউ। নারীদের বাইকে তুলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হঠাৎ হঠাৎ বাইকে ব্রেক ধরে। এগুলো মনিটরিং করে না রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। তাদের আরোহীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট দেওয়া হয়। এসব দ্রুত ঠিক করতে হবে।’