বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেতে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থক শিক্ষকরা লবিং-তদবির শুরু করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সচরাচর দলীয় বিবেচনায় এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নানের মেয়াদ আগামী ৭ মে শেষ হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের ৬ মে তিনি চার বছরের জন্য এ পদে নিযুক্তি পেয়েছিলেন। আগামী মাসে ইউজিসির দু’টি সদস্য পদও শূন্য হতে চলেছে। আরও একটি সদস্য পদ গত দু’বছর ধরে শূন্য রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইং থেকে জানা গেছে, ইউজিসির চেয়ারম্যান ও সদস্যের দু’টি পদ মে মাসে শূন্য হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বর্তমানে সরকারি সফরে ইরান রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরবেন ২ মে। এরপর এসব পদের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে।
ইউজিসি উচ্চ শিক্ষার দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান। এটি সারাদেশের ৪৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি করে থাকে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মঞ্জুরি প্রদান, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, নতুন বিষয় ও অনুষদ খোলার অনুমতি, বৈদেশিক বৃত্তি প্রদানও ইউজিসির অন্যতম কাজ। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেয়েও ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ইউজিসি চেয়ারম্যান পদে পরবর্তী চার বছরের জন্য নিয়োগ পেতে সরকারি মহলে গত কয়েকদিনে তদবির ও লবিং বেশ জোরালো হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ পদে যুক্ত হওয়ার অভিলাষ নানাভাবে ব্যক্ত করেছেন। তাদের নাম নানাভাবে মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিতে আলোচনায়ও এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজান উদ্দিন প্রমুখ।
জানা গেছে, আলোচিত শিক্ষকদের মধ্যে প্রথম তিনজনই মূলত এ পদের সবচেয়ে শক্তিশালী দাবিদার। সরকারের ‘গুডবুকে’ এগিয়ে থাকা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অধ্যাপকদের মধ্যে অনেকের চেয়ে তারা গ্রহণযোগ্য।
একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের উপাচার্য পদের দুই মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। তিনি নতুন নতুন বিভাগ খুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের বিস্তার ও সম্প্রসারণ করেছেন। সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। এসব বিবেচনায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এপেক্স বডি হিসেবে ইউজিসির চেয়ারম্যান পদের জন্য সরকারের কাছে বিবেচিত হতে পারেন।
অন্যদিকে, ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান দক্ষ হাতে ইউজিসি সামলেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম বন্ধে তিনি কঠোর হতে পেরেছেন। চার বছরের মেয়াদকালে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। সজ্জন, সদালাপী মানুষ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। ফলে সরকারের সিদ্ধান্তে তিনি আরও এক মেয়াদের জন্য (আগামী চার বছর) পুনর্নিয়োগ পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সূত্র মতে, রসায়নের শিক্ষক ড. শরীফ এনামুল কবির বিজ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত। তিনি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্টজন হিসেবেই পরিচিত। এসব বিবেচনায় তিনিও এ পদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
এদিকে, গতকাল রোববার ফেসবুকে বিভিন্নজনের পোস্ট ও স্ট্যাটাসে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক চার বছরের জন্য ইউজিসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন। না বুঝে অনেকে এ সংবাদ শেয়ারও করেন। কেউ কেউ ফোন করে তাকে অভিনন্দন জানান। পুরো বিষয়টিতে তিনি বিব্রত ও ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রশাসনের নীতিনির্ধারক একজন শীর্ষ আমলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ইউজিসির চেয়ারম্যান পদ একটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও উচ্চ শিক্ষার নীতিনির্ধারণী পদ। পদটি শূন্য হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চাওয়া হবে। সৎ, যোগ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রাজ্ঞ কোনো শিক্ষাবিদই এ পদে নিয়োগ পাবেন।’
ইউজিসিতে চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি পাঁচজন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে একটি পদ দীর্ঘ দুই বছর ধরে শূন্য রয়েছে। মে মাসে আরও দু’টি পদ শূন্য হবে। আগামী ২৭ মে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. ইউসুফ আলী মোল্লা ও প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগমের মেয়াদ পূর্ণ হবে। তারা দু’জন যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ ও বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে যোগ দিয়েছিলেন। মেয়াদ শেষে তারা আগের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদমর্যাদার ইউজিসি সদস্য পদে নিয়োগ পেতেও সরকার সমর্থক অনেক শিক্ষক চেষ্টা-তদবির করছেন।