ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হবে: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফাইল ছবি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হবে। তিনি আমেরিকার ফক্স নিউজ টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন।

জাওয়াদ জারিফ বলেন, “ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মার্কিন সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির কোনো মূল্য নেই। পরমাণু সমঝোতা থেকে শুরু করে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদসহ এ সংস্থার অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা এসবই ট্রাম্প সরকারের বেআইনি পদক্ষেপ যা বহু মেরুকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিরাট হুমকি। এ অবস্থায় ইরানের সঙ্গে সংলাপে বসার যোগ্যতা আমেরিকার নেই।”

ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের বহু বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫৩ সালের আগস্টে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমেরিকা ইরানের জনপ্রিয় মোসাদ্দেক সরকারের পতন ঘটায়। এরপর থেকে তারা সবসময়ই ইরানের তেল উত্তোলন ও রপ্তানির অজুহাতে প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করার চেষ্টা চালিয়েছে অন্যদিকে, ইরানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে এ অঞ্চলে মোড়লিপনা চালিয়ে গেছে।

ইসলামি বিপ্লবের পর গত ৪০ বছরে ইরানের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের আচরণ থেকে বোঝা যায় তারা অতীতের সাম্রাজ্যবাদী নীতিরই অনুসরণ করছে। আমেরিকা তার সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধ, অভ্যুত্থান, নিষেধাজ্ঞা, হুমকি, হত্যা, মিথ্যা অভিযোগ আরোপ প্রভৃতি কৌশল অবলম্বন করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা একই নীতি গ্রহণ করেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আইআরজিসির কমান্ডারদের এক সমাবেশে আমেরিকাকে বিশ্বাস করা যায় না উল্লেখ করে বলেছেন, “বিপ্লবের পর গত ৪০ বছর ধরে আমেরিকা ইরানে সঙ্গে শত্রুতা করে আসছে। পরমাণু সমঝোতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এ শত্রুতা দেখে আসছি।”

যাইহোক, বর্তমানে আমেরিকা ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে ইরানের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। আমেরিকার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে এ অঞ্চলে ইরানের ইতিবাচক ভূমিকাকে ধ্বংসাত্মক হিসেবে তুলে ধরা এবং বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা। তবে তাদের এ স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না।

খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুল বারি আতাওয়ান বলেছেন, আমেরিকা তেল নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইরানের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এ পদক্ষেপের অর্থ আগুন নিয়ে খেলা করা। তিনি বলেন, “ইসরাইলের উস্কানিতে আমেরিকা যে যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে তাতে কেবল সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” তিনি আরো বলেন, ইরান একটি শক্তিশালী দেশ এবং ভূকৌশলগত দিক থেকে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ইরান তার সামরিক শক্তি দিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম এবং প্রতিপক্ষকে নতজানু করার ক্ষমতা রাখে।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি বলেছেন, “ইরানের তেল হরমুজ প্রণালী অতিক্রম করতে না পারলে অন্যদের তেলও ওই প্রণালী দিয়ে যেতে পারবে না।” তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইরানের জাহাজগুলোও হরমুজ প্রণালী অতিক্রম করছে, কিন্তু কেউ যদি এই প্রণালীকে অনিরাপদ করে তোলে তাহলে ইরান তার মোকাবেলা করবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে