জৈনপুরী পীর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর ছোট ভাই অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

ডেস্ক রিপোর্ট

জৈনপুরী পীরের ভাই অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলীতে জৈনপুরী পীর ওরফে হেলিকপ্টার হুজুর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর ছোট ভাই নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বন্দুক ও গুলির খোসাসহ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এসপি হারুন অর রশিদ।

এসপি হারুন অর রশিদ বলেন, কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন পত্রিকা ও ফেসবুকে খবর আসছে নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী জঙ্গি ড্রেস পরে রিভলবার ও এসএমজি হাতে নিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। তারই প্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তে দেখা যায় ৫ এপ্রিল গভীর রাতে এইচএন এপারেলস নামক একটি পোশাক কারখানায় লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত এক-দেড়শ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ ঘটনার পরই আলোচিত ওই হেলিকপ্টার হুজুরের ছোট ভাইয়ের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। পোশাক কারখানায় হামলার ঘটনায় আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। তার কাছ থেকে বন্দুক ও গুলির খোসাসহ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এসপি হারুন বলেন, নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী কেন জঙ্গি ড্রেস পরে অস্ত্র হাতে ফেসবুকে ছবি ও স্ট্যাটাস দিয়েছেন সেটি আমরা তদন্ত করে বের করব। নেয়ামত উল্লাহ কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কিনা সেটিও আমরা বের করব। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলির খোসাগুলো কি কারণে এবং কোথায় ব্যবহার করেছে সেটিও বের হবে। পাশাপাশি কেন পোশাক কারখানায় লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে তাও তদন্ত করে বের করব আমরা।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন শাহ পারভেজ বলেন, নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী বন্দুক-পিস্তলসহ ফেসবুকে ছবি দেয়ার পরই বিষয়টি পুলিশ সুপারের দৃষ্টিতে আসে। এরপর দ্রুত নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীকে গ্রেপ্তার ও পিস্তল উদ্ধারের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। নির্দেশ মোতাবেক মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি শাহীন শাহ পারভেজ আরও বলেন, নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর কাছ থেকে একটি বন্দুক ও কিছু গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তিনি বন্দুকের লাইসেন্স দেখিয়েছেন। তারপরও আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ২৮ এপ্রিল রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি শাহীন শাহ পারভেজের নেতৃত্বে পাঠানটুলীতে নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর বাড়ি থেকে ছবিতে দেখানো পিস্তল ও বন্দুক উদ্ধার করা হয়। ওই সময় পুলিশ জানিয়েছে, ছবিতে দেখা যাওয়া ওই গুলো খেলনা পিস্তল ও বন্দুক। অবশ্যই তখন বাড়িতে নেয়ামত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন না।

২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে এইচএন এপারেলস নামক একটি পোশাক কারখানায় লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত এক-দেড়শ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়। এইচএন এপারেলস লিমিটেডের কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় জৈনপুরী পীর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর ছোট ভাই নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর নেতৃত্বে আমির উদ্দিন, মঞ্জুর রহমান, হাসানুর রহমান, ইমরান হোসেন, ফয়সাল, কাউসার, চঞ্চল, রাব্বি, শিবলু ও রোমানসহ অজ্ঞাত ১৫০ জন দলবদ্ধভাবে লাঠি, লোহার রড, বল্লম, শাবল নিয়ে এইচ এন এপারেলসের দেয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে কারখানার ১০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন ছাড়াও কারখানার অভ্যন্তরে থাকা প্রিন্টিং কেমিক্যাল, প্রিন্টিং মেশিন, কিউরিং মেশিন, কার্টন রোলসহ ১০ লাখ টাকা মূল্যের সামগ্রী লুটে নিয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা ফ্যাক্টরি ছেড়ে না গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এজাহারনামীয় আসামি আমির উদ্দিন, মঞ্জুর রহমান, হাসানুর রহমান ও ইমরান হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনার পরই আলোচিত ওই হেলিকপ্টার হুজুরের ছোট ভাইয়ের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। যে ছবিতে তার পাশে একটি বড় আগ্নেয়াস্ত্র রাখা এবং হাতে একটি রিভলবার এবং তার বেশভূষা আইএস জঙ্গিদের মতোই। এমন ছবি প্রকাশের পরই সর্বত্র শুরু হয় আলোচনার ঝড়। এমন ছবি দেখে একবাক্যে সবাই বলছে ‘এ ছবিতো আইএস জঙ্গিদের মতো’!

পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এ ছবির উৎস নিয়ে তদন্তে নামেন। খোঁজ নিয়ে গেছে, ওই ছবিটি নেয়ামত উল্লাহর বাসাতেই ছিল। বাসার কয়েকটি দেয়ালে ছবিটি বাঁধাই করা ছিল।

স্থানীয়রা জানান, নেয়ামত উল্লাহ ছোট থেকেই বেশ আগ্রাসী মনোভাবের। এ ধরনের ছবি দেখিয়ে এলাকাতে প্রভাব বিস্তার করতেন তিনি। বিভিন্ন উগ্রপন্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে