ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ফণী।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ফণী আগামী শুক্রবার উড়িষ্যার পুরি, গজপতি, জয়পুর, খোরধাসহ বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে।
এসময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নেওয়া ‘ফণী’ ঘিরে সর্বোচ্চ সর্তকতা জারি করা হয়েছে তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্র প্রদেশে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় তৈরি রাখা হয়েছে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের।
জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ) থেকে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ তিনটি প্রদেশে ৪১টি বিশেষ টিম পাঠানো হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আরও ২৩টি টিম।
উড়িষ্যার আবহাওয়া অফিস রাজ্যে হলুদ বিপদ সংকেত জারি করেছে। সেখানে খোলা হয়েছে ৮৭৯টি সাইক্লোন সেন্টার। যাতে ১০ লাখ লোক আশ্রয় নিতে পারবে। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী হেলিকপ্টার এবং জাহাজের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।
ঝড়টি মোকাবেলায় এরইমধ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ফণীর গতিপথ বিশ্লেষণ করে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত এ ঝড় অন্ধ্র উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হয়ে তারপর উত্তরে বাঁক নিয়ে ওড়িষ্যা উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে।
উপকূল পার হওয়ার পর ধীরে ধীরে কমে আসবে ফণীর দাপট। তবে তার আগে বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝরাবে বৃষ্টি, এর আওতায় থাকছে বাংলাদেশও।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করার এবং গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল ফণী।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আশপাশের আকাশ থেকে নিজের কেন্দ্রের দিকে মেঘ টেনে নেওয়ায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় গত চারদিন বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শনিবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম দেওয়া হয় ফণি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলে এ নামটি প্রস্তাব করে বাংলাদেশ, যার অর্থ সাপ।