আজ থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি

ফাইল ছবি

স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মধ্যে আসছে সারা দেশের সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা কার্যক্রম। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি শুরু হচ্ছে।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে দেশে কার্যত সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. খুরশীদ আলমের সই করা এক আদেশে এ নির্দেশেনা দেওয়া হয়। নির্দেশনাটি দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

universel cardiac hospital

আদেশে বলা হয়, দেশের সব বিভাগীয় শহরে ২ মে থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে হবে। ‘জাতীয় সঞ্চয়স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বহির্ভূত সঞ্চয়পত্র লেনদেন করা যাবে না। কালো টাকা বিনিয়োগ বন্ধে সরকার অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডাক বিভাগকে।

এর আগে অটোমেশন (অনলাইন) পদ্ধতিতে চলতি ৩ ফেব্রুয়ারি সঞ্চয়পত্র বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ব্যুরো অফিস (গুলিস্তান) এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের প্রধান কার্যালয়। অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন গত ৩ ফেব্রুয়ারি। সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের ৪২টি ব্যাচে ভাগ করে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিন্যান্সের (আইপিএফ) কম্পিউটার ল্যাবে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এবার অটোমেশন (অনলাইন) পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হবে সকল বিভাগীয় শহরে। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমদিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে দেশের সব জেলা ও উপজেলা শহরের কার্যালয়ে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি শুরু হবে।

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের অনলাইন তথ্যভান্ডার তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। তথ্যভান্ডারের কাজ শেষ হলে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ই-টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) জমা দিতে হবে। নতুন ব্যবস্থায় ৫০ হাজার পর্যন্ত টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। এর বেশি হলেই তা পরিশোধ করতে হবে চেকের মাধ্যমে। সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বরও দিতে হবে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ই-টিআইএনও জমা দিতে হবে। এ উদ্যোগের ফলে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই আসবে। চিহ্নিত করা যাবে তখন কালো টাকা বিনিয়োগকারীদেরও।

গত জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণে যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায় মন্ত্রী, সাংসদসহ তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা অর্থাৎ ধনী মানুষেরা ব্যাপক হারে সঞ্চয়পত্র কিনে রেখেছেন। জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর বিক্রয় পরিস্থিতি ও সুদ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী বলছে, সরকার ১০ বছরে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সুদ দিয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি বন্ডসহ বর্তমানে ১১ ধরনের সঞ্চয় কর্মসূচি চালু রয়েছে। এর মধ্যে ধনী মানুষেরা যেসব সঞ্চয়পত্র কিনে রাখেন, সেগুলোতেই সুদের হার বেশি।

আইআরডির তথ্য মতে, সরকারকে বেশি সুদ দিতে হয় পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে। এগুলোতে সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের মে মাসের আগে এগুলোতে সুদের হার আরও ২ শতাংশ বেশি ছিল।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে