ইফতারে ভেজাল রোধে অভিযানে নামছে ৫ সংস্থা

ডেস্ক রিপোর্ট

অভিযান
ভেজাল বিরোধী অভিযান। ছবি-সংগৃহিত

মজানে জনসাধারণ যাতে ন্যায্যমূল্যে ভেজালমুক্ত পণ্য ও ইফতার সামগ্রী কিনতে পারেন সেজন্য মাঠ পর্যায়ে অভিযানে নামবে সরকারি ৫ সংস্থা। গুলশান-বনানী কিংবা পুরান ঢাকার চকবাজার, ইফতারে ভেজাল রোধে ও মান শনাক্তে সব জায়গাতেই হাজির হবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকে, কখনও সাদা পোশাকে প্রতিদিন মাঠে থাকবেন তারা।

২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, র‌্যাব ও পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত একসঙ্গে অভিযানে নামে। তবে সে সময়ে তাদের অভিজ্ঞতাটা তেমন ভালো ছিল না। চকবাজারের মতো ঐতিহ্যবাহী ইফতারের বাজারে পাওয়া যায় পোড়া মবিল, গুলশানের বাজারে ইফতার সামগ্রীর ছিল আকাশচুম্বী দাম। এসবের বিরুদ্ধে অভিযান- জরিমানা করা হয়।

এবার আবারও একইভাবে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাগুলো। ভেজাল সন্ধানের পাশাপাশি করবে বাজার মনিটরিং।

universel cardiac hospital

রমজান মাসে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইতোমধ্যে পুরান ঢাকার ফল বাজারে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে ওই অভিযানে প্রায় ১০ হাজার কেজির মতো পচা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর জব্দ করা হয়।

আসন্ন রমজানেও মাঠে থাকার কথা জানিয়ে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘রমজানের আগে আমরা খেজুরসহ নানা খাদ্যদ্রব্যের কোল্ড স্টোরেজ, গোডাউন ও কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছি। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর জব্দ করা হয়েছে, তবে বাজারে অন্যান্য ফলের মান ভালো রয়েছে। সবাই নিশ্চিন্তে এগুলো খেতে পারবেন।

তিনি বলেন, পবিত্র এই মাসে রাজধানীতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাবে র‌্যাব। মূলত অভিযানগুলো হবে ইফতার ও খাবারকেন্দ্রিক। যাতে কেউ ইফতার পণ্যে কেমিক্যাল কিংবা রঙ ব্যবহার করতে না পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। পাশাপাশি যৌক্তিক মূল্য না নিয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এছাড়াও সারাবছর ভোক্তাদের সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মাঠে থাকবে রমজানে। তারা মূলত ইফতার সামগ্রী তৈরির পরিবেশ, খাবারের পরিমাণ, দাম, ওজনে কারচুপিসহ নানা বিষয়ে নজরদারি করবে। অভিযানে তাদের সহযোগিতা করবে আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন)।

এ বিষয়ে অধিদফতরটির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও খাদ্যে ভেজাল দেয়া যাবে না। এজন্য রমজানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ইফতার সামগ্রী তৈরির বিষয়ে বিক্রেতাদের সতর্ক করা হবে।

তিনি বলেন, এছাড়া ভেজালপণ্য বিক্রি, মিথ্যা বিজ্ঞাপন, ওজনে কারচুপি, অতিরিক্ত মূল্য আদায়সহ ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন হলেই আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। রমজান মাস জুড়ে রাজধানীর চকবাজার, বেইলি রোড, ধানমন্ডিসহ ইফতার সামগ্রী বিক্রি করে এমন সব এলাকায়ই অভিযান চালানো হবে। প্রতিদিন একাধিক স্পটে অভিযান চলবে।

প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানে ভেজালবিরোধী অভিযান চালাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রমজানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও ইফতারে খাদ্য ভেজাল নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পবিত্র এই মাসে রাজধানীতে ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিতে ও খাবারে সব ধরনের ভেজাল প্রতিরোধে কাজ করবে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ডিএমপির তত্ত্বাবধানে সক্রিয় থাকবে এই আদালত।’

এদিকে র‌্যাবের সঙ্গে যৌথভাবে ভেজালবিরোধী অভিযান শুরু করেছে দেশের একমাত্র মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই। ঢাকা ছাড়াও কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালাবে তারা।

বিএসটিআই জানায়, রমজান মাসে রোজাদাররা বিশেষ করে মুড়ি, খেজুর, কলা, সফট ড্রিংক পাউডার (ট্যাঙ, রাসনা) ইত্যাদি পানীয় ও খাবার খেয়ে থাকেন। বাজারে এগুলোর মান যাচাই করা হবে। অনেকে বিএসটিআইয়ের ভুয়া সিল দিয়ে নকল পণ্য তৈরি করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজানে বাজার মনিটরিংয়ের সব ব্যবস্থা নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও বাজার মনিটর করবে। রমজানকে ঘিরে কোনো ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে কি-না সে বিষয়টি আমরা নজরে রাখছি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে