ফণীর আঘাত থেকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ

সম্পাদকীয়

মত ও পথ

আমরা বরাবরই জেনে এসেছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। শতশত বছর ধরে আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। জিততে পারিনি। জলোচ্ছ্বাস, ঝড়, ভয়াবহ বন্যা কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। জ্ঞাত ইতিহাসে সেই ১৮৭৬ সালে প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ে এবং ঝড় পরবর্তী অসুখে ২ লক্ষ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। নিশ্চয়ই তার আগেও বহু মানুষ বৈরী প্রকৃতির কবলে পড়ে জীবন দিয়েছে। কিন্তু সে রেকর্ড আমাদের হাতে নেই।

১৮৭৬ সালের পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই কমবেশি জীবন হানি হয়েছে বাংলায়। এই তো সেদিন, বাংলাদেশ স্বাধীনের ঠিক ১ বছর আগে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়- জলোচ্ছ্বাসে ৫ লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। এরপর বড় আকারে জীবন দিতে হয় ১৯৯১ সালে। তখন ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরপর বড় আকারে আমাদের সামনে প্রলয়ঙ্কারী ঝড় নার্গিস, আইলা এবং সিডর মোকাবেলা করতে হয়। এ সময় অসংখ্য মানুষের জীবন কেড়ে নেয় এই ঝড়গুলো। প্রতিটি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী দুর্যোগ, রোগ, অব্যবস্থাপনার জন্য বড় সংখ্যক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাইক্লোন আইলা ২০০৯ সালে যখন আঘাত হানে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবেমাত্র সরকার গঠন করেছেন। তখনো সবদিক গুছিয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা  এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর লাখ লাখ মানুষ মরতে দেননি। গড়ে তুলেছেন উপকূলীয় অঞ্চলে আশ্রয় কেন্দ্র, প্রশাসনকে নিজে নির্দেশনার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক রেখেছেন। তার আরো একটি দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পেলাম ঘূর্ণিঝড় ফণীর বেলায়।

universel cardiac hospital

এই বিশাল ঝড় যখন বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। তিনি লন্ডন থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দিয়ে মাঠে রেখেছেন। ৪ মে ভারতের উড়িষ্যা ও পুরীতে আঘাত হেনে যখন বাংলাদেশের দিকে ধাবমান, তখন উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ২৫ লাখ মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ফলে জান-মালের ক্ষতি সর্বোনিন্ম পর্যায়ে রাখা গেছে।  যদিও ঘূর্ণিঝড় ফণী অনেকটা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনেক জীবন দিতে হতো। কিন্তু এতবড় ঝড়ে বিক্ষিপ্ত দু-একটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আমরা জানি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস পরবর্তীতে  খাবারের অপ্রতুলতা দেখা দেয়, রোগ-বিরোগ দেখা দেয়। যার ফলে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এটাই আমাদের বিগত দিনের অভিজ্ঞতা। কিন্তু ফণী পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পূর্বেই ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনী এক্ষেত্রে বিশেষ প্রশংসার দাবীদার। আন্তবাহিনী ৩২ টি জাহাজ, সি-প্লেন, হেলিকপ্টারসহ খাবার-ওষুধ নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে জান-মালের আর বিশেষ ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলাপ্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জান মাল রক্ষার চেষ্টা করছেন। 

এটিই হল একটি সরকারের সুশাসনের বড় উদাহরণ। দেশের প্রধানমন্ত্রীর যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি দায়িত্বশীল ব্যক্তি যার যার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তা আমরা ফণী মোকাবেলায় উদ্ভুদ্ধ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের তৎপরতা  থেকে দেখতে পেলাম। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছেন। আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতেও আমাদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারিরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এভাবেই ঝাপিয়ে পড়বেন। ফণীর আঘাত ও পরবর্তী দায়িত্বপালনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য  মত ও পথের পক্ষ থেকে আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনী এবং বেসামরিক প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে