যশোরের ঝিকরগাছার তামান্না আক্তার নূরা প্রমাণ করেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়। শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলছেন সমানে। জন্মগতভাবেই তার দুই হাত ও এক পা নেই। শরীরে শুধু একটিমাত্র পা-ই তার সম্বল। তবে সেই পা দিয়ে লিখেই এসএসসি’তে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তামান্না আক্তার নূরা।
তামান্না এ বছর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জে. কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
তামান্না নূরার বাবা রওশন আলী জানান, তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে বাংলায় এ গ্রেড হওয়ায় তামান্নার মন একটু খারাপ। তারপরও সার্বিক ফলাফলে আমরা খুশি। একটি পা নিয়ে মেয়েটি সংগ্রাম করে এতদূর এসেছে।
মা খাদিজা পারভিন শিল্পী জানান, দুটি হাত ও একটি পা ছাড়াই ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্ম নেয় তামান্না। তাকে বুকে চেপে বাড়ি ফেরেন বাবা-মা। সামাজিক অনেক প্রতিকূলতাও মোকাবেলা করতে হয় তাদের।
মা খাদিজা আরও বলেন, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ফলাফলে মেধা তালিকার পাশাপাশি এডাস বৃত্তি পরীক্ষায় প্রতিবার সে বৃত্তি পেয়েছে। লেখাপড়ার ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আজমাইন এডাস স্কুল থেকে পি.ই.সি ও ২০১৬ সালে বাঁকড়া জে.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জে.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
চলতি বছরে সে বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে কেন্দ্রে এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
তামান্নার বাবা বলেন, মায়ের কাছে প্রথমে অক্ষর জ্ঞান নিতে থাকে তামান্না। বাসা থেকে দূরবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা সহজ ছিল না। বাসা সংলগ্ন শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজমাইন এডাস স্কুলে তাকে নার্সারিতে ভর্তি করা হয়। মা স্কুলের ক্লাসে বাচ্চাকে বসিয়ে দিয়ে ক্লাসের বাইরে অবস্থান করতেন। তার শ্রবণশক্তি ও মুখস্থ শক্তি এত ভালছিল যে একবার শুনলে বিষয় আয়ত্ব ও মুখস্থ বলতে পারত।
এরপর অক্ষর লেখা শুরু করে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে চক ধরে। তারপর কলম ধরিয়ে লেখা আয়ত্ব করে সে। বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, আঙ্গুলের ফাঁকে চিরুনি, চামচ দিয়ে খাওয়া, চুল আঁচড়ানো সহজে আয়ত্ব করে তামান্না। ধীরে ধীরে নিজের ব্যবহারিত হুইল চেয়ারটি এক পা দিয়ে চালানোর দক্ষতা অর্জন করে।