পঞ্চগড়ে শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে রোগী দেখছেন অসুস্থ চিকিৎসক

সারাদেশ ডেস্ক

শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে রোগী দেখছেন অসুস্থ চিকিৎসক
শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে রোগী দেখছেন অসুস্থ চিকিৎসক। ছবি -ফেসবুক

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. কাজী আব্দুল্লাহ মারুফ নিজের অসুস্থ শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে রোগী দেখছেন।

অসুস্থ শরীরে রোগীকে সেবা দেয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তার এসব ছবি শেয়ার করে প্রশংসা করেছেন।

এসব ছবিতে দেখা যায়, ডাক্তারের মাথার ওপরে স্যালাইন ঝুলছে। পাশাপাশি ডাক্তার আর রোগী বসে আছেন। ইনফিউশন সেটটি রোগীর হাতে নয় শেষ হয়েছে ডাক্তারের হাতে। অর্থাৎ নিজের অসুস্থ শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে রোগী দেখছেন মেডিকেল অফিসার ডা. কাজী আব্দুল্লাহ মারুফ।

universel cardiac hospital

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ছবি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। সেখানে ৩৬তম বিসিএসের মেডিকেল অফিসার ডা. কাজী আব্দুল্লাহ মারুফ বৈকালিক দায়িত্ব পালন করছেন। বাইরের হোটেলের খাবার খেয়ে ফুড পয়জনিংয়ের শিকার হয়েছেন তিনি। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন ডা. কাজী আব্দুল্লাহ।

কিন্তু ওই দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক দায়িত্ব থাকায় নিজের অসুস্থ শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন ডা. আব্দুল্লাহ। পরে তার এসব ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।

‘বাংলাদেশ মেডিকেল সংবাদ’ ফেসবুক পেজে ছবিগুলো শেয়ার করে একজন লিখেছেন, ‘এ ধরনের ছবি হয়তো শুধুমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। অনেকে এই ডাক্তার সাহেবকে বাহবা দিলেও এটা আমাদের হেলথ সেক্টরের দৈন্যতার একটা চিত্র। এমন অসুস্থ অবস্থায় তাকে রিপ্লেস করার মতো অন্য কোনো ডাক্তার নেই। অগত্যা এক হাতে স্যালাইন আর অন্য হাতে কলম।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইউএইচএফপিও ছাড়া ১১ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা। আছেন তিনজন। একজন ফ্র্যাকচার হয়ে ছুটিতে, একজন আরএমওএর দায়িত্ব পালন করছেন। আরেকজন আমাদের এই বন্ধু। সকালের ডিউটি বাদেও সপ্তাহে কমপক্ষে চারদিন ইমার্জেন্সি দায়িত্ব পালন করতে হয়। ইএমওএর কোনো পোস্ট অর্গানোগ্রামেই নেই। শিশু কনসালট্যান্ট একজন আছেন, উনি আউটডোর রোগী দেখেন। সুইপারের সংখ্যা অপ্রতুল। রোগীর সিরিয়াল মেইনটেইনের মতো পর্যাপ্ত এমএলএসএস পর্যন্ত নেই। নিজেই টিকিট জমা নিয়ে নাম ডেকে ডেকে রোগী দেখতে হয়।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘যখন উপজেলায় পোস্টেড ছিলাম, তখন বাইরের হোটেলে খেতে হতো। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দেখা হলে বলতো স্যার আপনারাও এখানে খান। আপনাদের বাবুর্চি নেই? হেসে বলতাম, থাকার জায়গার-ই ভালো বন্দোবস্ত নেই, বাবুর্চি তো বিলাসিতা।’

ওই পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, ‘ইউএইচএফপিওদের গাড়ি দেয়া হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে সেবার মান বাড়বে। কিন্তু যারা সরাসরি সেবা পৌঁছাবেন সেই মেডিকেল অফিসারদের খাবার ব্যবস্থাও নেই। রাস্তার পাশে ‘হোটেল আল ছালা দিয়া ঢাকা’তে তিন বেলা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয়। ২৪ ঘণ্টা যারা সার্ভিস দেয় তাদের খাবার ব্যবস্থা হসপিটাল কর্তৃপক্ষ কেন করবে না? তাদের কেন অলিগলির হোটেলে খেয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় অসুস্থ হতে হবে।

পোস্টে তিনি আরও লিখেন, দুইজন ডাক্তার যে ১১ জনের দায়িত্ব পালন করছেন এটার মূল্যায়ন কীভাবে হবে? কোনোভাবেই তো এর কম্পেনসেশন দেয়া সম্ভব বলে মনে করি না। বেতনের সমপরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা হিসেবে দিলেও না। ডাক্তাররা এত আশা নিয়ে সরকারি চাকরিতে এসেও কেন তথাকথিত গ্রামগুলোতে থাকতে চান না এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কি আর দরকার আছে?’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে