মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেয়ার সময় কেরোসিন ছেটাতে ব্যবহৃত সেই গ্লাসটি মামলার আলামত হিসেবে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সাইক্লোন শেল্টারের দ্বতীয় তলায় অধ্যক্ষ সিরাজের দফতরের সামনের ওয়াল কেবিনেট থেকে এটি উদ্ধার করা হয়।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, রিমান্ডে থাকা মামলার আসামি শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম ও জাবেদ হোসেন ও জোবায়ের আহম্মদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিকেলে তাদের তিনজনকে নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় অভিযানে যায় পিবিআই। এ সময় মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষে দফতরের সমানের ওয়াল কেবিনেট থেকে গ্লাসটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ সময় পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, পরিদর্শক মো. মোনায়েম হোসেন, পরিদর্শক লুৎফুর রহমানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের তিনজনকে ফেনীর পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে হত্যাকাণ্ডের সময় বোরকা পরিহিত থাকা শাহাদাত হোসেন শামীম ও জোবায়ের আহম্মদের দুটি বোরকা উদ্ধার করা হয়।
আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে ওই অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ওই মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন রয়েছেন।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামালা দায়ের করেন। মামলার এজহারভুক্ত ৮ আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।