“এভাবেই শিয়া ধর্মীয় চিন্তার মধ্য দিয়ে বেলসহ চার হাজার নিহতের ওপর আশীর্বাদ নির্ভর করছে। কারবালা থেকে আমি ময়রা জেনিংসকে ফোন করলাম এবং জানালাম যে তার দাদার নাম এবং তার সমাহিত হওয়ার স্থলটি আমি খুঁজে পেয়েছি।”
এই কাহিনী লিঙ্কনশায়ারের একজন বৃদ্ধা, বহুদিন আগে মৃত একজন স্কটল্যান্ডের কৃষক এবং দক্ষিণ ইরাকের দয়ালু একজন শিয়া মুসলমানের। প্রথমজন হলেন ৮৭ বছর বয়স্ক ময়রা জেনিংস। আমি যখন ২০০৩ সালে অ্যাংলো-আমেরিকার অবৈধ ইরাক দখলের সংবাদ কভার করছিলাম, তখন তিনি ইংল্যান্ড থেকে আমার কাছে চিঠি লিখতেন। পরবর্তী সময়ে আমরা দুজন বেশ কয়েকটি চিঠি আদান-প্রদান করেছি। কিন্তু তার কথাগুলো আমার চেয়ে অনেক বেশি অলঙ্কারপূর্ণ ছিল। তিনি একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, “আমার পিতামহ ১৯১৬ সালে ২২ এপ্রিল নিহত হন এবং ইরাকের আমারায় ওয়ার সেটিারিতে (যুদ্ধে নিহতদের সমাধিতে) তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তিনি স্কটল্যান্ডের ব্ল্যাক ওয়াচ রেজিমেন্টে হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি স্কটল্যান্ডের এই কৃষি ফার্ম ছেড়ে যান এবং আর কখনোই ফিরে আসেননি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এমন পরিণতি অনেকের হয়েছিল। শিশুকালে আমি আমার দাদির সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। দাদার মেডালগুলো একটি ফ্রেমে বাঁধানো অবস্থায় দাদির দেয়ালে টাঙানো ছিল। আমি দাদির কাছে ওই মেডালগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেছিলেন, তুর্কিদের হাতে দাদা মেসোপোটেমিয়ায় (বর্তমান ইরাক) নিহত হয়েছেন। বিষয়টি আমার শিশুমনে ভীষণ রেখাপাত করে। ফলে আমি পরে আরও বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করি।”
ডেভিড ক্যামেরন বেল ছিলেন ব্ল্যাক ওয়াচের সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নের একজন সাধারণ সৈন্য। তার বাড়ি ছিল স্কটল্যান্ডের ফিফ এলাকায়। তার পিতার নাম ছিল হেনরি এবং মায়ের নাম ছিল ক্যাথেরিন। আর তার স্ত্রী ছিলেন এই ময়রার দাদি, যার নাম অ্যানি। এই দাদির বাড়ি ছিল ফার্থফিল। এটিও ফিফ এলাকায়। ময়রা জেনিংস অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ। বুশ-ব্লেয়ারের ইরাক দখল তাকে সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যে যুদ্ধের ১৪ বছর পর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সে সময়ের মোসোপোটেমিয়ার কাহিনী তিনি ভালো করেই জানেন। বেল যখন নিহত হন তখন তার বয়স ছিল ৪১ বছর। একজন বয়স্ক সৈনিকই বলা যায়।
সেই যুদ্ধে আমার নিজের পিতা অংশগ্রহণ করেন ফ্রান্সে। তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। ১৯১৫ সালে দফায় দফায় সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা তাইগ্রিস নদীমুখে যুদ্ধ করেন বাগদাদ পৌঁছানোর জন্য। তাদের সঙ্গে ছিল অসংখ্য ভারতীয় সৈন্য। কিন্তু শেষমেষ চূড়ান্তভাবে তুর্কি সেনারা কুট ও আমারার মাঝামাঝি মালভূমিতে তাদেরকে ঘিরে ফেলে। তখন ব্রিটিশরা ছিল ব্যর্থ জেনারেল চার্লস টাউনশেডের অধীনে।
এ সময় লরেন্স অব অ্যরাবিয়ার চেষ্টায় তুর্কি সৈন্যদের ঘুষ দিয়ে ব্রিটিশ সেনাদের ছাড়িয়ে আনতে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আটকে পড়া সৈন্যদের উপর মুহূর্মুহু শেল নিক্ষেপ করায় অনেক সৈন্য নিহত হয়। এ সময় সৈন্যরা বেঁচে থাকার জন্য ঘোড়ার মাংস, এমনকি ইঁদুর ধরে খেতে থাকে। যুদ্ধ ময়দানে কমে আসা সৈন্যদের মধ্যে কলেরা ছড়িয়ে পরে। অনেক সৈন্য যুদ্ধ ত্যাগ করে সরে পড়তে থাকে। ১৯১৬ সালের ২৯ এপ্রিল টাউনশেড আত্মসমর্পণ করেন। ততদিনে ৪ হাজার ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয় এবং এই নিহতদের পুতিগন্ধময় পানির নদী তাইগ্রিসের পাড়ে আমারা সেমিটারিতে সমাধিস্থ করা হয়। এটাই ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির সবচেয়ে বড় ধরনের পরাজয়।
ব্রিটিশ সেনা পতনের এই করুণ কাহিনী আরও বেশি হৃদয় বিদারক হয়ে ওঠে যখন তুর্কিরা বন্দী সৈন্যদের মার্চ করিয়ে মসুল হয়ে আনাতোলিয়া এবং পূর্ব তুরস্কে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত কাজের চাপে এবং কলেরায় সেখানে আবার হাজারো সৈন্য মারা যায়। তাদের অবস্থা হয়েছিল অনেকটাই ১৯১৫ সালের আরমেনিয়ার গণহত্যার মতো। কিন্তু জেনারেল টাউনশেডকে অত্যন্ত সমাদর করে নৌকায় চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কনস্টান্টিনোপলে। সেখান থেকে তিনি ফিরে আসেন ব্রিটেনে। নিজের সৈন্যদের সম্পর্কে বিশেষ কোনো কথা তার মুখে শোনা যায় নাই। তিনি আশা করেছেন ব্রিটেনে তারে ওয়ার হিরো হিসাবে বিবেচনা করা হবে। অনেকের মত তিনিও পরে ব্রিটেনে এমপি হয়েছেন এবং একজন আরব এক্সপার্ট হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলেন।
কিন্তু ২০১২ সালে ময়রা জেনিংস আমাকে যা লিখেছেন তা এরকম- “আমি জানি আমার দাদা যখন পড়ে যান, তখন তার সহযোদ্ধা নিচু হয়ে তার পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে নেন এবং সেটা আমার দাদির কাছে নিয়ে আসেন। সুতরাং তিনি কলেরায় মারা যাননি। এসব কথা আমি আমার দাদির কাছে শুনেছি এবং আমার ভেতরে কথাগুলো এত বছর ধরে নাড়াচাড়া করছে। স্বভাবতই আমার দাদি তুর্কিদের উপর ছিলেন খুবই বিরক্ত। আমি খুবই মর্মাহত যে আমার দাদা যুদ্ধে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন এবং আর ফিরে আসেননি। পাঁচটি সন্তান নিয়ে আমার দাদিকে ফার্ম ছেড়ে আসতে হয় এবং ভীষণ কষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকেন। সন্তানদের খাবার সংস্থানের জন্য তিনি আবার বিয়ে করেন।”
ময়রা জেনিংস আমার কাছে জানতে চান যে আমি তার দাদার সমাধিটি খুঁজে বের করতে পারি কি-না। তিনি আমাকে আমারা সিমেটারির ম্যাপ পাঠিয়ে দেন। সেই ম্যাপের একটি জায়গায় চিহ্নিত করা আছে, প্রাইভেট ডেভিড বেল, সার্ভিস নং এস/৭২৮৩। তিনি আমাকে যে কমনওয়েলথ-এর পুরাতন যুদ্ধসামাধির ম্যাপটি পাঠিয়েছেন তা থেকে আমার সহসাই কবরটি খুঁজে পাওয়ার কথা। কিন্তু আমি ১৫ বছর আগে বসরায় ব্রিটিশ যুদ্ধ সমাধিতে গিয়েছি। এবং সেই সিমেটারি বহু আগেই ইরাকের গৃহযদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ওয়ার গ্রেভ কমিশন অপহরণ এবং হত্যার ভয়ে এই সমাধিগুলো তত্বাবধান করতে পারেনি। কিন্তু তারপরও গতমাসে বাগদাদে এবং দক্ষিণ ইরাকে গিয়ে হঠাৎ আমার মনে হলো, আমি অন্তত জেনিংসকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি শেষবারের মত একটু সম্মান দেখাতে চেষ্টা করি।
একটা অসাধারণ সুযোগ এলো। ২২ এপ্রিল আমি কারবালা থেকে রওয়ানা দিলাম। ঠিক একই দিন যেদিন ডেভিড বেল আমারায় অন্তিম শয়নে গিয়েছিলেন। রাস্তা সোজা এবং খুবই উত্তপ্ত। যে তাইগ্রিস নদীর পাশে বেল নিহত হয়েছিলেন সেটা প্লাবিত হয়েছে। আমার আশঙ্কা হলো যে সেমিটারি, অথবা এর ধ্বংসাবশেষ যা আছে তার অবস্থাও বোধ করি করুণ। কিন্তু বেশি সময় লাগল না একটি শিশুদের পার্কের পাশে এবং গ্যাস স্টেশন আর নির্শান কাজের সামগ্রির স্তুপের পাশে সমাধি খুঁজে পেতে।
১৯২০ দশকের ইট দিয়ে তৈরি ব্রিটিশদের যুদ্ধ সমাধির গেট। অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ। কাটাতারের বেড়্ াদিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই গেট ময়রা জেনিংসের পাঠানো ম্যাপটিতে রয়েছে। নিয়মানুসারে অন্যান্য ব্রিটিশ সিমেটারির মতই যত্ন নেওয়ার কথা, যদি সেমিটারিতে আত্মত্যাগকারিদের নামফলকগুলোর অস্তিত্ব থাকে। কিন্তু সিমেটারির সম্মুখ গেট একেবারে খালি। বিশাল নির্মাণ কাজের ট্রাক ড্রাইভাররাও সব নির্বিকার। কিন্তু একজন উৎসাহ নিয়ে বলল, যে লোকটি এখানে বাস করেই ওই ছোট ইটের ঘরটিতে সে এখন নামাজে গিয়েছে। শিগগির ফিরে আসবে। তার নাম হাসান হুতায়েফ মুসা। আমি তুখর রোদ্রতাপের মধ্যে সমাধির পাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকলাম। আমার ইরাকের গাইড এবং ড্রাইভার হলো আমার নিরাপত্তা রক্ষী। ওরা আমার আগ্রহের ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করল। জানতে চাইল, “এই মিস্টার ডেভিড কে?” আমি বললাম, তিনি একজন শেফার্ড। তার পাঁচটি সন্তান ছিল। তিনি ঠিক এখানে আমারায় নিহত হয়েছিলেন। দুজনেরই মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। মনে হলো ডেভিড ওদের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। একজন ফার্ম করা লোক, আবার বেশিরভাগ ইরাকী পরিবারের মতই বড় পরিবারের লোক। ওদের কাছে মনে হলো, ডেভিড তাদের মতই একজন ইরাকী। আর আমার কাছে মনে হলো, ইংল্যান্ডের ফিফ জায়গাটি এখান থেকে দূরে নয়।
তারপর বিস্তৃত হাসিমুখে আসলেন হাসান। হাত মেলালেন। কাটা তার দিয়ে আটকানো গেটের তালা খুললেন। আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে আমন্ত্রণ জানালেন। ফল খেতে দিলেন। তারপর ভেতে গিয়ে একটি বিশাল সাইজের ম্যাপ নিয়ে এলেন। এটি কোনো কপি করা ম্যাপ না। ব্রিটিশ যুদ্ধের একেবারে আসল ম্যাপ। ১৯২২ সালের ২১ এপ্রিল সরকারিভাবে সিমেটারি চেক করা জে. কোলম্যানের দ্বারা। ওই সময় সবকিছু ছিল সুস্পষ্ট। প্রতিটি সমাধি কার তা চিহ্নিত করা ছিল। একটি করে পাথরের হেডস্টোন ছিল। পরিচ্ছন্ন ভাবে ঘাস কাটা ছিল। আজ আর তা নেই। আমারা যুদ্ধের সেমিটারির করুণ অবস্থা সবার জানা। কিন্তু সহসাই হয়ত ভুলে বিস্মৃত হয়েছে। হাসানের বাচ্চাদের স্কুলের বইয়ের সঙ্গে সিমেটারির ভিজিটর বই মিলে দ্বিগুণ হয়েছে। সেখানে দেখা যায় ২০১৫ সালে ব্রিটিশ কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভ কমিশনের কর্মকর্তারা এই জায়গা পরিদর্শন করেছেন। এবং বাগদাদে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ট্রেভর লুইস পরিদর্শন করেছেন ২০১৬ সালে। একজন কলিগ মার্টিন ফ্লেচারও এখানে এসেছিলেন। এবং ২০০৩ সালে ইরাক দখলের সময় অনেক সৈন্য এখানে এসেছেন।
হাসান আর আমি অপরিচ্ছন্ন ঘাসের ভেতর দিয়ে হেঁটে অনেকটা ভেতরে প্রবেশ করলাম। হেঁটে ভেতরে প্রবেশের সময় দেখলাম ক্রসগুলো একেকটি পাথরের টুকরা হয়ে পড়ে আছে। এই ধ্বংস মেরামতের বিশেষ সুযোগ নেই। এখনো দক্ষিণে শিয়া মিলিশিয়াদের অস্তিত্ব বর্তমান আছে। প্রত্যেকের সমাধিফলক ১৯৩০ এর দশকে রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে ক্ষয় হতে শুরু করেছিল। মাত্র দুটো এখনো টিকে আছে। কিন্তু এর কোনোটাই বেল এর না। কিন্তু আসল ১৭ নম্বর কংক্রিটটি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। হাসান আর আমি ই-৬ পর্যন্ত গেলাম।
আমার ফাইলের মধ্যে ময়রা জেনিংসের চিঠি নিয়ে এসেছি। আমি তার দাদার সমাধির উপর থেকে কিছু ঘাস তুলে নিয়ে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরলাম। ঠিক সে সময় আমার ড্রাইভার উচ্চস্বরে আমার উদ্দেশে চিৎকার করল। সে দাঁড়িয়েছিল দূরে একটি দেয়ালের কাছে। যেখানে বিভিন্ন জনের নাম সুষ্পষ্ট লেখা রয়েছে। হাসান আমাকে বলল, এগুলো রক্ষা করা কতটা কঠিন কাজ। মাত্র এক মাস আগে এখানে চোর ঢুকেছিল এবং স্লাভগুলো ভেঙে রেখে গেছে। আমি লক্ষ করলাম এর কতগুলো ১৯১৫ সালের স্ট্যাফোর্ডশায়ার রেজমেন্টের। ঘাসের উপর পড়ে আছে।
আমার ড্রাইভার একটি স্লাভ খুঁজে পেয়েছে যেটি ব্ল্যাক ওয়াচের। এবং সেখানেই দেখা গেল নাম খোদাই ‘প্রাইভেট ডি সি বেল ১৭-ই ৬’। তারমানে আজো ময়রা জেনিংসের দাদার নামটি এখানে উজ্জল হয়ে আছে।
হাসান অভিযোগ করলেন, এই কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না ১৯৯১ সাল থেকে। তার আগে তার পিতা এখানে কাজ করতের সেমিটারির রক্ষক হিসাবে। তিনি তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি কাজ করছেন বিনা পারিশ্রমিকে। সত্যিই এটা দুঃখজনক। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ১৯৯২ সালে সাদ্দাম হোসেনের সরকার কমনওয়েলথ কমিশনকে জানিয়ে দেয় যে তারা আর ওয়ার গ্রেভ-এর ২২ কর্মচারিকে রাখতে পারবে না। কমিশন তখন যৎসামান্য প্রদান করতে থাকে এবং বিনা ভাড়ায় সেটিারির ঘরে থাকতে দেয়। সে কারণেই হাসান এখানে ছোট ঘরে বসবাস করেন। কোনো পারিশ্রমিক পান না। কিন্তু আরও একটি ভয়ানক অভিযোগ করলেন হাসান। “কয়েক বছর আগে আমার প্রতিবেশি এবং বন্ধুরা আমাকে বললেন যে বিদেশিদের (ক্রিশ্চিয়ান) কবর দেখাশোনা করা নিষেধ আছে। তারা এ কথা আমাকে বারবার বলতে থাকে। আমি ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ি এবং একজন আয়াতুল্লাহর কাছে যাই। এই পরিস্থিতিতে তার ব্যখ্যা জানতে চাই। তিনি আমাকে জানান, পুত্র, তুমি অবশ্যই এ কাজ চালিয়ে যেতে পারো এবং মৃতদের সম্মান জানাতে পারো। এর পরিচর্যা করতে পারো, এদের বংশধররা হয়ত একদিন এখানে আসবেন।”
এভাবেই শিয়া ধর্মীয় চিন্তার মধ্য দিয়ে বেলসহ চার হাজার নিহতের ওপর আশীর্বাদ নির্ভর করছে। কারবালা থেকে আমি ময়রা জেনিংসকে ফোন করলাম এবং জানালাম যে তার দাদার নাম এবং তার সমাহিত হওয়ার স্থলটি আমি খুঁজে পেয়েছি। প্রকৃত অবস্থা কী- কে জানে। কিন্তু তার অবস্থা অথবা যা কিছু মিশে আছে এখানকার এই মাটির সঙ্গে। এই সপ্তাহে আমি ইরাক থেকে ফিরে সেই নিয়ে আসা ঘাস ময়রার লিঙ্কনশায়ারের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি বাস করেন প্রাচীন গ্রাম নর্থ হাইকেহামে। যা ফিফ থেকে অনেক দূরে। আমারার থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে। অথবা হয়ত অতটা দূরে নয়।
রবার্ট ফিস্ক: দি ইনডিপেন্ডেন্ট-এর মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি