আর্থিক খাতের ঋণগ্রহীতাদের সহজে শনাক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় ঋণগ্রহীতাদের নামের আগে ‘বরোয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার’ (বিআইএন বা ‘বিন’) বা ‘ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ নাম্বার’ সংযুক্ত করা হবে।
এর মাধ্যমে একদিকে সিআইবিকে শক্তিশালী করা হবে, অন্যদিকে ঋণ জালিয়াতি ঠেকাতে বেনামে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব হবে।
এর ফলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যারা ঋণ নেবেন তারা শনাক্ত বা পরিচিত হবেন ‘বিন’-এর মাধ্যমে। বিনের মধ্যে ঋণগ্রহীতার নাম-ঠিকানা, কোম্পানিসহ পরিচিতিমূলক সব ধরনের তথ্য থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জন্য আলাদা একটি সিআইবি স্থাপনের কাজ চলছে। এটি হলে সব ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা এর আওতায় চলে আসবেন। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিকে সংযুক্ত করা হবে। তখন ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জন্যও বিন পদ্ধতি চালু হবে। এভাবে আর্থিক খাতের সব ঋণগ্রহীতাকে বিনের আওতায় আনা হবে।
- আরও পড়ুন>> ঈদে বিআরটিসির বহরে যুক্ত হবে নতুন ১৫০ বাস
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এটি একটি নতুন কাজ হবে। এটি হলে ঋণ জালিয়াতি কমানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে জালিয়াতি হলেও সহজেই শনাক্ত করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এটি চালু করার ব্যাপারে অনেক আগেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা পক্ষের বিরোধিতার কারণে সম্ভব হয়নি। এটি হলে জাল-জালিয়াতির প্রবণতা যেমন কমবে, তেমনি ঋণগ্রহীতাদের সিআইবি প্রতিবেদন খুব সহজেই পাওয়া যাবে। এতে সব পক্ষই উপকৃত হবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবির সদস্য হিসেবে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে নিজস্ব সিআইবি। এতে গ্রাহকদের ঋণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য থাকে।
বিন চালুর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিআইবির প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
এতে তারা এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বিষয়টি নিয়ে তাদের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করছে। ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গেও এর কারিগরিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সব দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া মিললে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে সব ঋণগ্রহীতার নামের আগে একটি করে বিন নাম্বার যুক্ত হবে। তখন ওই নাম্বার ধরেই ঋণগ্রহীতাদের তথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে। এতে সহজেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সব তথ্য পাওয়া যাবে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে ১ টাকার ঋণগ্রহীতার তথ্যও রয়েছে।
বর্তমানে ঋণগ্রহীতার নাম, পিতার নাম, কোম্পানির নাম এসব তথ্য ধরে সিআইবিতে অনুসন্ধান করা হয়। গ্রাহকের নামের বানান ভিন্ন ভিন্ন হলে অনুসন্ধানে জটিলতা বাড়ে। একই নামের গ্রাহক যেমন একাধিক আছে, তেমনি তাদের পিতা, মাতা ও গ্রামের নামও একই হওয়ার নজির রয়েছে।
ফলে সিআইবিতে কাক্সিক্ষত ব্যক্তিকে খুঁজে পেতে বেশ সময় লাগে। ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন নামের বানান ও ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করার কারণে সঠিকভাবে গ্রাহককে সিআইবিতে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একই গ্রাহক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে একাধিক ঋণ নিচ্ছেন। এগুলো খেলাপি হলে তখন আর গ্রাহককে পাওয়া যায় না।
এসব জটিলতা নিরসন এবং ঋণগ্রহীতাদের সহজে শনাক্ত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিন নাম্বার চালু হলে কোনো গ্রাহক একবার ঋণ নিলে পরে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে গেলে ওই নাম্বারের ভিত্তিতে সব তথ্য পাওয়া যাবে। তবে বেনামে বা তথ্য গোপন করে নিলে তা পাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেনামে ঋণ নিলেও একটি বিন নাম্বার পড়বে। ফলে ওই নাম্বার ধরে গবেষণা করলে জালিয়াতির ঘটনা শনাক্ত করা সহজ হবে। কেননা একটি ঋণ খেলাপি হলে সিআইবি সংকেত দেবে। তখন এগুলোর কারণ অনুসন্ধান করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এজন্য সিআইবিতে জনবল বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সিআইবির তথ্য গবেষণা করার জন্য আলাদা একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে।
বর্তমানে আয়কর দাতাদের শনাক্ত করতে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন), ভ্যাটদাতাদের শনাক্ত করতে ভ্যাট আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (ভিআইএন) চালু আছে।
বর্তমানে নতুন ঋণ নিতে গেলে, জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের যে কোনো সংস্থায় নির্বাচন করতে, এফবিসিসিআই নির্বাচন করতে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে হলে সিআইবি থেকে প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খেলাপি কিনা সে বিষয়ে সিআইবি প্রতিবেদন দিয়ে থাকে।