জঙ্গি হামলার আশঙ্কা, সতর্ক থাকার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের

বিশেষ প্রতিনিধি

‘জঙ্গিবাদকে ধর্মের ওপর চাপানো যাবে না’
ফাইল ছবি

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা মতাবলম্বী ব্যক্তি বা উপাসনালয়ে জঙ্গিরা হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

এজন্য পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও টার্গেট করতে পারে জানিয়ে গোয়েন্দা নজরদারি, টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।


শনিবার (১১ মে) ডিএমপি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ সভায় কমিশনার এই নির্দেশনা দেন। সভায় ঢাকার ৫০ থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, গোয়েন্দা পুলিশ ও সিটিটিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা নির্ভরযোগ্য একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক জঙ্গিদের বিভিন্ন হুমকি ও নতুন করে সংগঠিত হওয়ার খবর গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তা মোকাবিলার জন্য নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার।

বিশেষ করে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে গুলশান-বারিধারা, বিদেশি নাগরিকদের কর্মস্থল ও আবাসস্থল, চার্চ, প্যাগোডা, মন্দিরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে পুলিশ সদস্যদের নিজেদেরও সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দেন তিনি।


এদিকে শনিবার ভারতীয় জি-নিউজের এক প্রতিবদেনে আগামী ১৮ মে বৌদ্ধপূর্ণিমায় পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশে জঙ্গিরা হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো’র (আইবি) বরাত দিয়ে আইএসপন্থী জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ‌‌‘ফিদায়ী’ হামলা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছে।

এছাড়া গত মাসে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার পর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এমনিতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরমধ্যেই গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তান এলাকায় তিন পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।

ঘটনার পর সেই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস। ওই দিন সকালেই এলিট ফোর্স র‌্যাব রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালালে দুই জঙ্গি আত্মঘাতী হয়।

এছাড়া আল-কায়েদা সমর্থিত বালাকোট মিডিয়ার মাধ্যমে জঙ্গিদের ‘লোন উলফ’ হামলার পরিকল্পনার খবরও প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি।

তবে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, আসন্ন বৌদ্ধপূর্ণিমা উদযাপনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক হামলার সুনির্দিষ্ট কোনও আশঙ্কা নেই।

তারপরও, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বৌদ্ধ মন্দিরসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য পুলিশের সকল ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


ওই কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চালাতে বলা হয়েছে। স্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজাতে বলা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি পুলিশিং ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তা নিতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জঙ্গি প্রতিরোধেযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট হামলার তথ্য না থাকলেও আগে থেকেই পুলিশ সতর্ক রয়েছে। জঙ্গিরা তাদের নিজস্ব যোগাযোগ চ্যানেলে রমজান মাসকে হামলার জন্য ‘পবিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদান করেছে।

একারণে যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সিটিটিসির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সারা দেশে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটগুলোর কাছেও পাঠানো হয়েছে।


শনিবার অপরাধ সভার একটি সূত্র জানায়, কমিশনার দ্রুত বা ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে রাজধানীতে অবস্থানরত ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কারণ, হিসেবে তিনি সিআইএমএস (সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)-এর মাধ্যমে সকল ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ শেষ হলে জঙ্গিবাদসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলেও মন্তব্য করেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে