টাঙ্গাইলে ধানের দাম কম ও দিনমজুর না পাওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করেছেন এক কৃষক। আজ রোববার দুপুরে জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের আব্দুল মালেক সিকদার তার রোপণকৃত ধানে আগুন ধরিয়ে এমন প্রতিবাদ করেছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকায়। অন্যদিকে একজন শ্রমিকের দিন মজুরি ৮৫০ টাকা। এতে প্রতি মণ ধানে কৃষককে গুণতে হচ্ছে লোকসান। ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ।
রবিবার দুপুরে উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা এলাকায় আব্দুল মালেক সিকদার ধানক্ষেতে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁর এই প্রতিবাদে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন এলাকার অধিকাংশ কৃষক। পাকা ধানে আগুন দেখে অনেকেই ছুটে আসেন।
এ বিষয়ে মালেক সিকদার বলেন, ‘প্রতিমণ ধানের দাম থেকে প্রতি শ্রমিকের মজুরীর দাম দ্বিগুণ। এবার ধান আবাদ করে আমরা মাঠে মারা পড়েছি। তাই মনের দুঃখে পাকা ধানে আগুন দিয়েছি।’
এদিকে কালিহাতীর আউলটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান মজনু নামের আরেক কৃষক তার ক্ষেতের পাকা ধান এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী ধান কেটে অর্ধেক অংশ নিজে এবং বাকি অর্ধেক অংশ ক্ষেত মালিককে দিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে জেলার মির্জাপুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। তার বিপরীতে শ্রমিকের দিনমজুরী ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা।
রকিবুল ইসলাম নামের এক চাষী বলেন, ‘বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি মণ ধান ঘরে তুলতে হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করছি তার অর্ধেক দামে। এবার আমরা পথে বসে গেছি।’
এছাড়া আরও কয়েকজন কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, ‘কৃষককে ধানের ন্যায্য দাম দিয়ে বাঁচাতে হলে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।’
এদিকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এলেঙ্গাতে শ্রমিকের হাটে রবিবার সকালে গিয়ে দেখা যায় রংপুর থেকে আসা একজন শ্রমিক ৮শ থেকে ৯শ টাকায় প্রতিদিনের জন্য বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের ধানের জমির মালিককে তিনবেলা খাবারও দিতে হয়।
কৃষি নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বর্তমানে কৃষকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। লাভ তো দূরের কথা ধান চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে বিপুল পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন পাকা ধানক্ষেতে আগুন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়া উচিত। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর ধানের বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি বিঘায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কৃষকের লোকসান হচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারকে কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবেই কৃষক উপকৃত হবে।’