ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মানি লন্ডারিংয়ের (বিদেশে মুদ্রা পাচার) যে অভিযোগ উঠেছিল তার কোনো সত্যতার প্রমাণ মেলেনি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে।
আজ রোববার রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত হত্যা মামলায় কোনো অবৈধ লেনদেন হয়েছে কিনা- তা আমরা তদন্ত করছি। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে মানি লন্ডারিং হয়নি। অল্পকিছু টাকা লেনদেন হয়েছে যা মানি লন্ডারিং পর্যায়ে পড়ে না।
- আরও পড়ুন >> নুসরাত হত্যা : ফেনীর এসপিও শাস্তির আওতায় আসছেন
‘আমরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের আগে সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাকসুদ আলম অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ দৌলাকে ১০-১২ হাজার টাকা দিয়েছিল। ওই টাকা দিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বোরকা, হিজাব, কেরোসিন ও দড়ি কেনা হয়েছিল। এছাড়া আর কোনো লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি আমরা আরও তদন্ত করে দেখছি।’
এর আগে সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে কোনো অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে অর্থ জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হবে। এরপর এ ঘটনায় মানি লন্ডারিং হয়েছে কিনা- সিআইডি সে তদন্ত শুরু করে।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। সে সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় যান।
সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত। ওই ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
পরবর্তীতে সোনাগাজী থানায় অভিযোগ নিয়ে যাওয়া নুসরাতের সঙ্গে ওসি মোয়াজ্জেমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নুসরাতের মৃত্যুর পরদিন ‘নুসরাতের পরিবারকে অসহযোগিতার অভিযোগে’ প্রত্যাহার করা হয় ওসিকে। এরপর পুলিশ সদরদফতরের উচ্চপর্যায়ের কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ী চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।