নৌকাডুবিতে নিহত কতজন বাংলাদেশি নিশ্চিত নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মত ও পথ ডেস্ক

আবদুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। ফাইল ছবি

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, সে সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এ কথা জানিয়েছেন। আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, এই নৌকাডুবিতে ৩৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাননি তিনি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উদ্ধার হওয়া ১৪ জনের সবাই বাংলাদেশি। যাঁদের এখনো পাওয়া যায়নি, তাঁদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য নেই। যেহেতু ৩৭ জনকে পাওয়া যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৩৫ জন মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনা জানার পর আজ সেখানকার দূতাবাস থেকে এক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে চলে গেছেন। যাঁরা নিখোঁজ, তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। উদ্ধার হওয়ার ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে।

এদিকে তিউনিসিয়া রেড ক্রিসেন্টের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে এক নৌকা ডুবিতে নিহত প্রায় ৬০ জন অভিবাসীর অধিকাংশই ছিল বাংলাদেশি নাগরিক।

বেঁচে যাওয়া লোকজন তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লিবিয়ার উপকূল থেকে ৭৫ জন অভিবাসী একটি বড় নৌকায় করে ইটালির উদ্দেশে রওনা হন। গভীর সাগরে তাদের বড় নৌকাটি থেকে অপেক্ষাকৃত ছোটো একটি নৌকায় তোলা হলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি ডুবে যায়।

তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিমকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাবারের তৈরি ‘ইনফ্লেটেবেল’ নৌকাটি ১০ মিনিটের মধ্যে ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে শনিবার সকালে জারযিজ শহরের তীরে নিয়ে আসেন।

উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের ১৪ জনই বাংলাদেশি

উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা জানান, সাগরের ঠান্ডা পানিতে তারা প্রায় আট ঘণ্টা ভেসে ছিলেন। উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের ১৪ জনই বাংলাদেশি। যে ১৬ জনকে শনিবার সকালে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের একজন সিলেটের আহমেদ বিলাল। ওই নৌকায় আরও কয়েকজন সিলেটের নাগরিক ছিলেন বলে জানা গেছে।

তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তারা জানান, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে এ দুর্ঘটনায় ৬৫ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৬ জনকে জীবিত উদ্ধারের কথাও তারা জানান। তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা টিএপির খবর অনুযায়ী ডুবে যাওয়া নৌকায় ৭০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন। সি ফ্যাক্স উপকূলের ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে এটি ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিস থেকে ওই স্থানের দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, মর্মান্তিক ওই নৌকাডুবির পর অভিবাসীদের উদ্ধারে একটি মাছ ধরার নৌযান নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তিউনিস নৌবাহিনী। তারা জীবিতদের পাশাপাশি তিনজনের মরদেহ উদ্ধারে সমর্থ হয়।

তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এ ঘটনাকে ভূমধ্যসাগরের ‘আরেকটি বিয়োগান্তক ঘটনা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, জাহাজটি পাশের দেশ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ছেড়ে এসেছিল।

সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা জানান, ডুবে যাওয়া শরণার্থীদের মধ্যে লিবীয় ছাড়াও বাংলাদেশ ও মরক্কোর নাগরিকরা ছিলেন। তবে নৌকাটিতে ঠিক কতজন বাংলাদেশি বা কোন দেশের কতজন নাগরিক ছিলেন, তা জানা যায়নি। এ বছরের প্রথম চার মাসে লিবিয়া থেকে ইউরোপ পাড়ি দেয়ার সময় নৌকা ডুবে কমপক্ষে ১৬৪ জন মারা গেছেন বলে জাতিসংঘ বলছে।

ত্রিপলিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সিকান্দার আলী বলেন, তারা দুর্ঘটনার কথা জানেন এবং তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। যত দ্রুত সম্ভব তারা জারযিজে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

অভিবাসীদের ভাষ্যমতে, নৌকাটিতে ৫১ জন বাংলাদেশি ছাড়াও তিনজন মিশরীয় এবং মরক্কো, শাদ এবং আফ্রিকার অন্যান্য কয়েকটি দেশের নাগরিক ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে