আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশন, ছন্দে থাকা প্রতিপক্ষ বা প্রস্তুতি ম্যাচে হারের স্মৃতি- ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নামার আগে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ খুব কম ছিল না। ব্যাট-বলে নিজেদের উজাড় করে দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জগুলো জিতেছিল টাইগাররা। চমৎকার শুরু পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বেঁধে ফেলেছিল ২৬১ রানে। এরপর টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের অসামান্য প্রদর্শনীতে ৮ উইকেট হাতে রেখেই মুঠোবন্দি করেছিল জয়। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডকে দুই ম্যাচে হারিয়ে এরই মধ্যেই সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে ক্যারিবীয়রা। আজ সোমবার ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে জিতলে বাংলাদেশও নিশ্চিত করবে ফাইনাল।
আইরিশদের বিপক্ষে টাইগারদের প্রথম ম্যাচটা ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। ম্যাচটি না হওয়ায় নিজের হতাশা খোলাখুলিই প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস। ম্যাচ খেলা মানেই নিজেদের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো নিয়ে আরও ভালো ধারণা পাওয়া আর সেগুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকা। বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজের প্রতিটি ম্যাচই তাই বাংলাদেশের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি না হওয়ায় নিজেদের প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সেই ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার মতো আছে অবশ্য অনেক কিছুই। দলের সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটারের চারজনই দারুণ পারফর্ম করেছেন। ১০ ওভারে ৪৯ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, ৪৭ রানে তিনি পান ২ উইকেট। স্পিনে রান আটকানোর কাজ করেছেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮ উইকেট হাতে রেখেও শেষ ১০ ওভারে উইন্ডিজের মাত্র ৬৪ রান তুলতে পারাটাই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
রান তাড়াটা যেন ছিল ‘প্রায়’ নিখুঁত। শুরুতে তামিম কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন বটে, তবে থিতু হওয়ার পর খেলেন চমৎকার সব শট, আউট হওয়ার আগে করেন ৮০। অন্য প্রান্তে শুরু থেকেই বোলারদের ওপর আধিপত্য ধরে রাখেন সৌম্য, তামিমের ম্লান হয়ে থাকার সময়টায় রানের চাকা সচল রাখার কাজটা করেন তিনিই। ৭৩ রানের চমৎকার এক ইনিংসে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সিরিজ শুরু হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাসী থাকবেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তামিম-সৌম্যর ১৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর হাল ধরেন সাকিব। বলপ্রতি রানে করা তার অপরাজিত ৬১ রানেই পথ হারায়নি বাংলাদেশ। চারে নেমে দলের জয়কে ত্বরান্বিত করেন মুশফিকুর রহিম।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই হারকে পেছনে ফেলে অবশ্য পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে উইন্ডিজ। সুনিল আমব্রিসের ১৪৮ রানের ইনিংসে ভর করে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে তারা পেয়েছে রান তাড়ায় নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়। আইরিশদের ৩২৭ রান তাড়ায় ৫ উইকেট ও ১৩ রান হাতে রেখেই জিতেছে তারা। আজকের ম্যাচটিও হবে একই মাঠে, সেক্ষেত্রে বড় রান তাড়ার প্রস্তুতি নিয়ে নামবে দু’দলই। সিরিজে এখন পর্যন্ত উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে এসেছে চারটি সেঞ্চুরি, এর মধ্যে শেই হোপ একাই করেছেন দুটি। ২০০৬ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আর কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টেই এত বেশি সেঞ্চুরি পায়নি ক্যারিবিয়ানরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের শেষ তিন ম্যাচের সব ক’টিতে সেঞ্চুরি করা হোপকে আটকাতে নিশ্চিতভাবেই আজ আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে নামবেন বোলাররা। নিজের বোলিং নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে মুস্তাফিজুর রহমানকেও। প্রথম ম্যাচে দু’টি উইকেট পেলেও রান যে তিনি দিয়েছেন ৮৪!