কবি হায়াৎ সাইফকে বাংলা একাডেমির শেষ শ্রদ্ধা

ডেস্ক রিপোর্ট

লেখক, কবি, প্রকাশক ও সংস্কৃতিজনরা শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালেন কবি হায়াৎ সাইফকে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমাগার থেকে কবির মরদেহ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নিয়ে আসা হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে।

universel cardiac hospital

প্রথমে সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে বাংলা একাডেমি শ্রদ্ধা জানায়। এরপর কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, জাতীয় কবিতা পরিষদ।

শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন রামেন্দু মজুমদার, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার, কথাশিল্পী আবু সাঈদ জুবেরী। কবিদের মধ্যে ছিলেন জাহিদুল হক, কামাল চৌধুরী, আসাদ মান্নান, জাহাঙ্গীর ফিরোজ, সালেম সুলেরী, হালিম আজাদ, গৌরাঙ্গ মোহান্ত, তারিক সুজাত, আমিনুর রহমান। আরও ছিলেন লেখক আমিনুল ইসলাম বেদু।

সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ, ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক আতাউর রহমান, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, প্রকাশক নিশাত জাহান রানাও প্রয়াত কবির কফিনে ফুল দেন।

কবির ছেলে জিসান সাইফ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তার বাবার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে, সেখানে জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

আগামী ২০ মে সকাল ১১টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে কবি হায়াৎ সাইফ স্মরণসভার আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি।

রোববার রাত ১২টা পাঁচ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান কবি একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি হায়াৎ সাইফ। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। কিডনি জটিলতাসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি।

১৯৪২ সালে ঢাকায় জন্ম হায়াৎ সাইফের। সাইফুল ইসলাম খান সাহিত্যাঙ্গনে হায়াৎ সাইফ নামেই পরিচিত ছিলেন।

গত শতকের ষাটের দশক থেকে লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে হায়াৎ সাইফের প্রবেশ। ১৯৬২ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তৎকালীন সমকালে। আর ১৯৮৩ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সন্ত্রাসে সহবাস’ প্রকাশিত হয়।

তার ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে কবিতার সংকলন আটটি আর প্রবন্ধ সংকলন দুইটি। এছাড়া বিভিন্ন সাময়িকীতে তার অসংখ্য লেখাসহ ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায়ও তার কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

১৯৯২ সালে তার লেখা সাহিত্য বিষয়ক সংকলন গ্রন্থ ‘উক্তি ও উপলব্ধি’ প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে মাহবুব তালুকদারের সাথে যৌথভাবে বাংলাদেশের সমসাময়িক গদ্য নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় তার ৭৫টি কবিতার সংকলন ‘প্রধানত স্মৃতি এবং মানুষের পথচলা’।

১৯৯৮ সালে দিব্য প্রকাশ থেকে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘ভয়েস অব হায়াৎ সাইফ’ নামে একটি ইংরেজিতে অনুদিত কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়, এতে সংকলিত হয়েছে ৪৫টি কবিতা। ২০০১ সালে পাঠক সমাবেশ থেকে ‘হায়াৎ সাইফ: সিলেক্টেড পয়েমস’ প্রকাশিত হয়।

সাহিত্যে অবদানের জন্য কবি হায়াৎ সাইফ ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

লেখালেখির পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের সাবেক জাতীয় কমিশনার (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) এবং আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কাউটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া স্কাউটিংয়ে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিশ্ব স্কাউট সংস্থার সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘ব্রোঞ্জ উলফ’ এবং বাংলাদেশে স্কাউটসের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ অর্জন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা হায়াৎ সাইফ কর্মজীবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সদস্য ও পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।

পারিবারিক জীবনে কবি হায়াৎ সাইফ তিন ছেলের জনক ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে