দুধে কীটনাশক-সিসা : ডা. শাহনীলাকে হাইকোর্টে তলব

ডেস্ক রিপোর্ট

দুধে সিসা : ১০ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা
ফাইল ছবি

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় গাভীর দুধে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদনসহ প্রতিষ্ঠানটির ডা. শাহনীলা ফেরদৌসকে হাজির হতে বলেছে হাইকোর্ট।

বুধবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

universel cardiac hospital

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুহম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান।

পরে আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে এনএফএসএল এর কারিগরি ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসকে ওই প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি এখনো এ প্রতিবেদন আদালতে জমা দেননি। এ কারণে আগামী ২১ মে ওই প্রতিবেদনসহ হাইকোর্টে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

ফরিদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছি। আমরা তাতে বলেছি, এক মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবো। এটা বিশাল একটি কাজ। বিভিন্ন রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে। মিটিং করে তা স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর ও নিম্নমানের তা নিরূপণ করে প্রতিবেদন দিতে হবে। আমরা ডা. শাহনীলার প্রতিবেদন সংগ্রহ করবো। এর আগে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের করা ১৬ সদস্যের কমিটিতে তিনিও একজন সদস্য।  

গত ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘গাভীর দুধ ও দইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক, সিসা!’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাভীর দুধে (প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া) সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন অণুজীবও। একই সঙ্গে প্যাকেটজাত গাভীর দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত। বাদ পড়েনি দইও। দুগ্ধজাত এ পণ্যেও মিলেছে সিসা।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় এসব ফলাফল উঠে এসেছে। সংস্থাটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গাভীর খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে এ জরিপের কাজ করেছে।

ওই প্রতিবেদন নজরে আসার পর ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্বতপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।

আদেশে গাভীর দুধ (প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া) ও বাজারের প্যাকেটজাত দুধ, দই এবং গো খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, সীসা, রাসায়নিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর তা নিরূপণে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এই কমিটিকে প্রতি ৬ মাস পরপর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য মানুষ যাতে সঠিক তথ্য সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের এই আদেশ কার্যকর করতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, খাদ্য, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পরিবেশ সচিবের কাছে আদেশের অনুলিপি সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুধ, দই ও গো-খাদ্যে ভেজাল মেশানোর ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুধ, দই এবং গো-খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে একটি কমিটি গঠন করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কমিটিকে তিনমাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এছাড়া জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের কারিগরি ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসের প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রুলে নিরাপদ দুধ, দই ও গো-খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও ভেজাল প্রতিরোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি এবং অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভেজাল দুধ, দই ও গো খাদ্য উৎপাদন, পরিবহন, প্যাকেটজাতকরণ, বাজারজাতকরণ এবং সংরক্ষণ করা কেন বেআইনী ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও খোলাবাজার থেকে এসব ভেজাল দুধ, দই ও গো-খাদ্য অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চেয়েছে আদালত।

ওই আদেশের পর ৮ মে বুধবার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম আদালতে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পরে ফরিদুল ইসলাম বলেছিলেন, ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি কর্মপরিধিও তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দুধ, দই ও পশুখাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার বিষয়টি যোগ করতে বলেছেন। এছাড়াও কমিটির ফাইনাল রিপোর্টে যেন জড়িতদের নাম থাকে সেটি বলেছে আদালত।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭ ফেব্রুয়ারি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে একটি জরুরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনাক্রমে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

২৭ ফেব্রুয়ারি কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ১. চার সপ্তাহের (২৪ এপিল থেকে আগামী ২২ মে) মধ্যে কাঁচা, তরল ও পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ, গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটির ফলাফল পর্যালোচনা; ২. পশু খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ এবং গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটি কর্তৃক ফলাফল পর্যালোচনা (২৩ মে থেকে ২২ জুনের মধ্যে); ৩. (২৩ মে থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে) প্রাথমিক উৎপাদন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ, ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং কমিটির যথাযথ সুপারিশ প্রণয়ন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে