উন্নত বিশ্বের আদলে সাজানো হচ্ছে দেশের ফায়ার সার্ভিসকে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘ফায়ারম্যান’ পদনাম বদলে করা হচ্ছে ‘ফায়ার ফাইটার’।
নিয়োগবিধি সংশোধন ও জনবল কাঠামো বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্মাণ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন। প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়াতে আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজের জন্য কেনা হবে বিশেষ হেলিকপ্টার।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের জন্য ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে কল্যাণ ট্রাস্ট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকে আরও শক্তিশালী করতেই এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র বলছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে ফায়ার সার্ভিসকে আরও আধুনিক করতে চায় সরকার। কেননা দেশে নগরায়ন ও শিল্পায়ন বৃদ্ধি পাওয়া অগ্নিঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।
এই ঝুঁকি মাথায় নিয়েই উন্নত বিশ্বের আদলে সাজানো হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, ইরান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ন্যায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে গড়ে তোলা হবে সেবাধর্মী এ প্রতিষ্ঠানটিকে।
প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সংশোধন করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগবিধিও। গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন।
ওই সময়ই তিনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের বিদ্যমান পদসমূহের নাম বদলের নির্দেশনা দেন। ‘ফায়ারম্যান’-এর পরিবর্তে ‘ফায়ার ফাইটার’ নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদনের জন্য এ সংক্রান্ত প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
*আরও পড়ুন>> আজ শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
কথা হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসকে শক্তিশালী ও কর্মক্ষম করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
নিয়োগবিধি সংশোধন ও জনবল কাঠামো বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। উন্নত বিশ্বের আদলে ‘ফায়ারম্যান’-এর নাম বদলে ‘ফায়ার ফাইটার’ করার প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মাণের সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে বাহিনীর জনবলও। বাহিনীর সদস্যদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে কল্যাণ ট্রাস্ট। এসব পদক্ষেপ কার্যকর হলে বাড়বে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা। শক্তিশালী হবে ফায়ার সার্ভিস।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনে নেয়া প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এসব স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
উপজেলাগুলোতে নতুন ঘরবাড়ি ও কল-কারখানা হচ্ছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিবেচনা করে সব উপজেলায় ৫৬৫টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ইতিমধ্যে ৪০৬ উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৫৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এসব স্টেশন তৈরির কাজ শেষ হলে মানুষের জানমাল সুরক্ষায় ফায়ার সার্ভিসের সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাই বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো সংশোধন করে ১১ হাজার ৯৮০ থেকে ২৫ হাজারে উন্নীতকরণের কার্যক্রম চলছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে।
চলমান এসব প্রকল্প শেষ হলে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬৫টিতে। জনবল দাঁড়াবে প্রায় ১৬ হাজারে। বাহিনীর সদস্যদের জন্য গঠিত কল্যান ট্রাস্টে প্রধানমন্ত্রী এককালীন ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।’
সম্প্রতি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘোষণা দিয়েছেন, আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের জন্য বিশেষ ধরনের হেলিকপ্টার কেনা হবে।
গত ৩ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সভায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের জন্য বিশেষ ধরনের হেলিকপ্টার ক্রয় করা হবে, যা দিয়ে উদ্ধার এবং আগুন নিয়ন্ত্রণ দুটোই হবে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকায়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে।