এবার মসজিদ-মাদ্রাসায়ও বসছে সিসি ক্যামেরা

বিশেষ প্রতিনিধি

মসজিদ-মাদ্রাসায়ও বসছে সিসি ক্যামেরা
সিসি ক্যামেরা। ফাইল ছবি

এবার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসায়। নিরাপত্তার জন্যই এসব সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে বলে জানান এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

রাজধানীর মোহাম্মাদপুর কবরস্থান সংলগ্ন জামিয়া ইসলামীয়া ওয়াহাদিয়া মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা জুবায়ের হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় ১০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এর অর্থায়ন করেছেন মাদ্রাসার সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টু।

universel cardiac hospital

হঠাৎ করে মাদ্রাসাগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কারণ জানাতে চাইলে মাদ্রাসাটির প্রধান এ মাওলানা বলেন, প্রথমত আমরা নিরাপত্তার জন্যই এই সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি। তবে বিভিন্ন সময় আমাদের মাদ্রাসায় চুরিও হয়, সেটা ঠেকাতেও সিসি ক্যামেরা ব্যবহৃত হবে। একটি কক্ষ থেকে সবগুলো কক্ষ মনিটরিং করতেও এ সিসি ক্যামেরা ব্যবহৃত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসা সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সঙ্গে ‍মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মোহাম্মাদপুরের আরেক মাদ্রাসা জামিয়া মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুফতি আব্দুল মোমিন বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সমস্যাগুলো হচ্ছে তাতে মসজিদও আমাদের কাছে অনিরাপদ হয়ে উঠছে! মুসল্লি বেশে কেউ জুতা চুরি করে, আবার কেউ বোমাও মারে। এসব কারণে ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশেষ করে কোনো মসজিদ বা মাদ্রাসায় কেউ জঙ্গি কার্যক্রম করতে না পারে সেজন্য আমরা এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তবে পুরুষ মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা বসানো হলে সমস্যা নেই। কিন্তু মহিলা মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা বসলে আমি বলবো এটা শরিয়তসম্মত হবে না। এটা পর্দার ক্ষতি হবে। 

মাদ্রাসাগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে প্রশাসনের নির্দেশনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, তা আসেনি। তবে নিরাপত্তা-তো সবাই চায়, এটা দরকারও বটে। আপনি জানেন দুষ্কৃতিকারীরা সংখ্যায় বেশি হয় না। গুটিকয়েক মানুষ দোষ করবে আমরা পুরো কমিউনিটি এর খেসারত দিবো- এটা হয় না। এজন্য কিছু কিছু মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, বাকীগুলোতেও লাগানোর প্রচেষ্টা চলছে।

মুফতি মোমিন আরও বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় কিছুদিন আগে গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন সদস্য এসেছিলেন। তাদেরকে আমরা আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষকদের মোবাইল নাম্বার, স্থায়ী ঠিকানাসহ সব ধরনের তথ্য দিয়েছি। এর আগেও এমন তথ্য র‌্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দিয়েছি।

মুফতি আব্দুল মোমিন বলেন, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে তাতে দোষী কতজন? অথচ এর জন্য লাখ লাখ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত এবং বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।

জানা গেছে, রাজধানীর আরেক কওমী মাদ্রাসা জামে রহমানিয়া মাদ্রাসাসহ বেসকিছু মাদ্রাসা থেকে শিক্ষকদের তথ্য নেওয়া হয়েছে।

দারুল ইমান মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে যেকোন জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটলেই মানুষের চোখ পড়ে মাদ্রাসার উপর। ফলে আমরাও ভাবছি মাদ্রাসাগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হোক। যাতে এসব জায়গায় ইসলামের লেভেলে কেউ জঙ্গিবাদ করতে না পারে।

এদিকে, রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত জামিয়া মোহাম্মাদিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার ভাইস-প্রিন্সিপাল মাওলানা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপাতত জুনিয়র লেভেলের কিছু শাখায় সিসি ক্যামেরা লাগাব। পরবর্তী সময়ে হয়তো সব রুমে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। কারণ এটাতো হঠাৎ করেই হবে না। আর্থিক বিষয় জড়িত।

হঠাৎ করেই মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কোন কথা বলতে রাজী হয়নি এই মাদ্রাসা শিক্ষক।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে