সাগরে মাছের সংখ্যাবৃদ্ধির স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিকে সমুদ্র-অঞ্চলের জেলেরা বলছেন যে, দীর্ঘ দুই মাস যদি তাদের একমাত্র জীবিকা মাছ ধরা চালিয়ে না যেতে পারেন তাহলে তাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আজ সোমবার থেকে ৬৫ দিনের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।
সাগরে মাছের সংখ্যাবৃদ্ধির স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিকে সমুদ্র-অঞ্চলের জেলেরা বলছেন যে, দীর্ঘ দুই মাস যদি তাদের একমাত্র জীবিকা মাছ ধরা চালিয়ে না যেতে পারেন তাহলে তাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নৌকা মালিক সমিতিদের কেউ কেউ মানব-বন্ধনের ডাক দেয়ার কথা বলছেন।
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া দ্বীপে বসবাসরত তৃষ্ণা জলদাস বিবিসি বাংলাকে জানান, তিনি বংশ পরম্পরায় মাছ ধরা এবং বিক্রি সংশ্লিষ্ট কাজ করে থাকেন। দৈনিক ছোট নৌকায় মাছ ধরেন সংসার চালানোর জন্য। কিন্তু ৬৫দিনের এই নিষেধাজ্ঞায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন তিনি।
তিনি বলেন, যেমন ধরেন ইলিশ ফিশিং এর সময় ২২ দিন বন্ধ হয়ে যায়, তারপরেও আমরা কোনো আবেদন জানাই না। সেই সময়েও আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এবার এই ৬৫ দিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা কীভাবে যে চলবো? আমাদের বাচ্চাদের লেখাপড়া, ঋণ আছে, দৈনিক বাজার, খরচ এসব চালানোই তো আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না।
ইলিশের মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে শুধু ট্রলারের ওপর এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এবার সকল প্রকার নৌযান অর্থাৎ, ছোট ফিশিং বোট, ইঞ্জিন চালিত নৌকা এর আওতায় পড়েছে। আর এর ব্যাপ্তিও বাড়ানো হয়েছে। যার মধ্যে দ্বীপ অঞ্চল রয়েছে। আর সামুদ্রিক মাছ ধরে জীবনযাপন করা জেলেরা সরকারের এ নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে অখুশী।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সাগরে মাছের সংখ্যাবৃদ্ধির স্বার্থেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে যারা ছোট নৌকা চালিয়ে মাছ ধরেন সেসব জেলেরা এটা একেবারেই মানতে পারছেন না।
মহেশখালীর জেলে জয়নাল আবেদিন জানান, দ্বীপ অঞ্চলে তাদের আর কোনো কর্মসংস্থান নেই তাই এই দীর্ঘ সময় তাদের জন্য দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা তৈরি করবে। আর সেন্টমার্টিন এবং টেকনাফের যেসব জেলেরা আছেন তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এবং বলছেন এর প্রতিবাদে তারা মানববন্ধন করবেন।
টেকনাফের জেলে আব্দুল গফুর জানান, এই ঘোষণার আগেই তারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে স্মারকলিপি দিয়েছেন যাতে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ না করা হয়। এখন তারা ডিসি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পরশু আমরা মাইকিং করেছি, সেন্টমার্টিন এবং টেকনাফের সব জেলে আমরা একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করবো। এভাবে আমরা আমাদের কর্মসূচী চালিয়ে যাব।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলি খসরু বিবিসিকে জানান, মাছের যোগানের ভারসাম্য রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, এ সময়টা হলো মাছের প্রজননের সময়। বিভিন্ন দেশে এসময়টাতে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। আর আমাদের এখানে যেসব ইলিশ মাছ ডিম ছাড়তে আসে, সেগুলো এবং জাটকা মাছগুলো সাগরে নেমে যায়। তাই সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখছি আমরা।
- উত্থানের একদিন পর শেয়ারবাজারে বড় দরপতন
- সিরিয়া ইস্যু : রুশ-তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জরুরি ফোনালাপ
- সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে : প্রধানমন্ত্রী
সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়ে মৎস ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা হলো যারা জেলেদের উপর অর্থ লগ্নি করেন তাদের একটা মাথা ব্যথা। তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে এবং আমরা সমুদ্রে নৌযানগুলো নামতে দেব না। এটার জন্য নেভাল এবং কোস্টগার্ড সমুদ্রে টহল দিচ্ছে।
এদিকে যে ৬৫দিন ধরে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে সেই সময়টাতে সরকারের এই বছরে কোনো প্রনোদনা দেয়ার পরিকল্পনা নেই। তবে পরবর্তীকালে জেলেদের প্রনোদনা এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
সূত্র : বিবিসি বাংলা