মোদির সাফল্যের মূলে পাকিস্তানে বিমান হামলা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মোদির সাফল্যের মূলে পাকিস্তানে বিমান হামলা!
ফাইল ছবি

ভারতের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ (সিএসডিএস) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলার পর জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ছাপিয়ে মোদিকে আরেকবার ক্ষমতায় দেখার প্রত্যাশ্যা জোরালো হয়ে উঠেছে ভারতীয়দের কাছে।

ধারণা করা হচ্ছিল চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ বেকারত্বের হার, ভয়াবহ কৃষি সংকট আর খাদ্য মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোটাররা লোকসভা নির্বাচনে হয়তো অর্থনৈতিক ইস্যুকেই প্রাধান্যের কেন্দ্রে রাখবে। ভরাডুবি হবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের।

কিন্তু সিএসডিএস-এর জরিপে উঠে এসেছে, কিছুদিন আগেও দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব, কৃষি ও খাদ্য সংকটের মতো মৌলিক জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ভোটারদের কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিল, ভোটদানের সময় পর্যন্ত তা একইরকম থাকেনি। বরং জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে ভোটারদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে মোদি সরকার।

সিএসডিএস-এর পর্যবেক্ষণ মতে, পুলওয়ামাতে সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বাহিনীর হামলার পর জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ছাপিয়ে মোদিকে আরেকবার ক্ষমতায় দেখার প্রত্যাশ্যা জোরালো হয়ে উঠেছে ভারতীয়দের কাছে। ভোটের আগে-পরে দুই ধাপে পরিচালিত জরিপেই অবশ্য অংশগ্রহণকারীদের একটা ছোট অংশ জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে রাখার কথা জানিয়েছিল।

সিএসডিএস-এর জরিপে দেখা গেছে, পরোক্ষে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুটি ভোটারদের একটা বড় অংশের মনোভাব প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। সে কারণেই জনগুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোকে পেছনে রেখে মানুষ মোদির ‘উন্নয়ন’ প্রচারণার মধ্যেই নিজের ভবিষ্যত খোঁজার চেষ্টা করেছে।

লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের কাছে কোন ইস্যুগুলো জরুরি ছিল, তা নিয়ে সিএসডিএস-এর জরিপের ভিত্তিতে একটি বিশ্লেষণাত্বক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। লোকনীতি কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ওই জরিপটি সম্পন্ন হয়েছে দুই ধাপে।

ভোটের আগে ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৯ রাজ্যের ১০ হাজার দশজন ভোটারের তথ্য নিয়ে প্রথম জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন চলাকালীন ২৪ রাজ্যের ২১ হাজার ৬৪৭ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি ধাপের নির্বাচন শেষে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

দুই ধাপে সংগৃহীত তথ্য বিচার করে তুলনামূলক বিশ্লেষণ হাজির করা হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। নির্বাচন পরবর্তী যে ডাটা নিয়ে এখানে কথা বলা হচ্ছে তা কেবল ছয় ধাপের নির্বাচন নিয়ে পরিচালিত জরিপের তথ্য।

এখানে শেষ ধাপের নির্বাচনের জরিপ যুক্ত করা হয়নি। তবে জরিপকারীদের দাবি, শেষ ধাপের নির্বাচনের তথ্য যুক্ত করা হলেও এ সংখ্যায় অনেক পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

প্রথম ধাপে নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে ১৯টি রাজ্যে পরিচালিত ওই জরিপে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের ২১ শতাংশ বলেছিল, কর্মসংস্থান সংকট তথা বেকারত্বই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় ভোটিং ইস্যু। ভোট পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় ধাপে পরিচালিত জরিপে বেরাকত্বকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলেছেন মাত্র ১২ শতাংশ ভোটার।

প্রথম জরিপে ৭ শতাংশ ভোটার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ইস্যুকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে এসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কিংবা মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটিং ইস্যু হয়েছে ৪ শতাংশ ভোটারের কাছে।

নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩৮ শতাংশ ভোটার জানিয়েছিল যে, বেকারত্ব, মূল্য বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, মজুরি ও পারিশ্রমিক, কর ও কালো টাকার মতো অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোকেই তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

দ্বিতীয় ধাপের জরিপে এসে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে ২৫ শতাংশ ভোটার, নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপের তুলনায় যা ১৩ শতাংশ কম। নির্বাচন পরবর্তী জরিপে ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে উন্নয়নের ইস্যুটিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ৯ শতাংশ জানিয়েছেন উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়কে (সড়ক, পানি, বিদ্যুৎ, স্কুল, হাসপাতালের মতো অবকাঠামো) তারা সর্বাগ্রে রাখছেন।

দ্বিতীয় ধাপে  ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা উন্নয়ন (১৭ শতাংশ) ও উন্নয়ন-সংক্রান্ত (৯ শতাংশ)  ইস্যুকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে। ফলে দ্বিতীয় ধাপে এসে অর্থনৈতিক ইস্যুকে (সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে ২৫ শতাংশ) ছাপিয়ে উন্নয়ন ইস্যুটি শীর্ষস্থানে চলে এসেছে। 

দ্বিতীয় ধাপে এসে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৭ শতাংশ  (প্রতি ৬ জনে ১ জন) হ্যাঁ-না প্রশ্নের উত্তর দেননি, যা নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপের তুলনায় দ্বিগুণ। ভোটারদের অগ্রাধিকারের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ইস্যু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উন্নয়নের মতো আবছা ধারণায় ধাবিত হওয়া কিংবা জরিপের সময় প্রশ্নের উত্তর দিতে না চাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে দ্য হিন্দু।

জরিপসূত্রে ওই সংবাদমাধ্যম বলছে, এটি শুধু ভোটারদের দ্বিধাকেই সামনে নিয়ে আসেনি, বরং এর মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত মিলেছে নিজেদের ভোট চয়েসের সঙ্গে মিল রেখে তারা ইস্যুগুলো শনাক্ত করছে। 

জরিপে দেখা গেছে, জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে অর্থনীতি কিংবা উন্নয়ন নামের ধারণার মধ্যে দিয়ে দেখার ক্ষেত্রে ভোটারদের রাজনৈতিক বিবেচনা প্রধানতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

ভোটারদের কাছে কোন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে তা নিয়ে রাজ্যভিত্তিক জরিপে দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, কর্নাটক, উত্তরাখন্ড, জম্মু ও কাশ্মির, অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় উন্নয়নের বিষয়টি এককভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটিং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আর উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, হরিয়ানা, গুজরাট, বিহার, ঝাড়খণ্ড আর তামিলনাড়ু রাজ্যে অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো ভোটারদের দিক থেকে জরুরি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গোটা দেশের সাপেক্ষে বেকারত্বের ইস্যুটি হিন্দিভাষী ওই রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের ফ্যাক্টর হয়েছে। কৃষিখাতের বিপন্নতার বিষয়টিও অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিল নাড়ু, উত্তর প্রদেশ আর ঝাড়খণ্ডের ভোটারদের কাছে জরুরি হিসেবে বিবেচনায় এসেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে