কুড়িগ্রামে উলিপুরে বাবার চেয়ে মাত্র দেড় বছরের ছোট ছেলে! আশ্চর্যজনক মনে হলেও এমনই অবাস্তব ঘটনা ঘটেছে উপজেলার আবু বকর সিনিয়র মাদরাসার পিয়নের নিয়োগের ক্ষেত্রে। বিষয়টি শিক্ষা বিভাগের নজরে নেই দাবি করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে , উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নে তবকপুর আবু বকর সিনিয়র মাদ্রাসায় ২০১৬ সালে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় আনোয়ারুল ইসলাম এবং কাবিল উদ্দিন দুই জন পিয়ন পদে নিয়োগ পান। আনোয়ারুল ইসলাম একই ইউনিয়নের খামার তবকপুর গ্রামের মৃত উমর আলীর পুত্র। নিয়োগ পাবার পর নভেম্বর মাসেই যোগদান করেন এই দুজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারুল ইসলাম ও কাবলি উদ্দিন এরা দুজনেই মূলত ৫ম শ্রেণি পাশ হলেও নিয়োগে দেখান হয় ৮ম শ্রেণি। এই দুজনের এমপিও হয় ২০১৮ সালের মার্চ মাসে। এমপিও সিটে দেখা যায় ইনডেক্স ২১২১৭৮৫ নম্বরে আনোয়ারুল ইসলাম ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ জন্ম তারিখ দেখানো হয়। তার এনআইডি ১৯৭৮৪৯১৯৪৭৮৬৩৪৩৩৭ নং কার্ডে দেখা যায়, জন্ম ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮। পিতা-উমর আলী, মাতা- মোছা: শেফালী বেগম। শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণি। গ্রাম-খামার তবকপুর (০৭৬৩)। ভোটার সিরিয়াল নং- ৫৮৩ এবং ভোটার নং-৪৯০৭৬৩৬৩৪৩৩৭। তিনি চাকরিতে যোগদানের সময় বয়স লুকালেও তার এনআইডিতে আসল বয়স লুকায়নি।
- আরও পড়ুন >> সংসদের উপ-সচিবরা পাচ্ছেন গাড়ি
এছাড়াও তার বড় ছেলে আবু সুফিয়ান ২০১০ সালে এসএসসি পাশের সনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ রয়েছে ১১ ডিসেম্বর ১৯৯৬। ভুয়া কাগজপত্রাদির মাধ্যমে চাকরি নিয়ে নিয়মিত সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন নিয়োগকৃত আনোয়ারুল ইসলাম এবং কাবিল উদ্দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, আনোয়ারুল ইসলাম ইনডেক্স ২১২১৭৮৫ নম্বর এবং কাবিল উদ্দিন ২১১৮২৯২ ইনডেক্স নম্বরে নিয়মিত বেতন ভাতাদি তুলেছেন। তারা দুজনই ১৬ লাখ করে ৩২ লাখ টাকায় নিয়োগ নিয়েছেন। এনআইডিতে তারা জন্ম তারিখ ঠিক রেখে সাল পরিবর্তন করেছেন বলে জানান তারা।
আনোয়ারুলের ছেলে কারমাইকেল কলেজে মাস্টার্স করছে এবং কাবিল উদ্দিনের বড় ছেলে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি মাস্টার্স করছে। এমন অনিয়মের বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তারা জানলেও কেউ কোন ব্যবস্থা নেননি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত আনোয়ারুল ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ছোট ছেলে শামীম ফোন ধরে বলেন, কি বলার আছে আমাকে বলেন। আমার বাবাকে ফোন দিতে পারব না।
এই বিষয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আইয়ুব আলী জানান, এই নিয়োগ গুলো আমার আমলে হয়নি।
প্রয়াত অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুছ সাহেবের সময়কার। তবে এই বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ
করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবকপুর আবু বকর সিনিয়র মাদরাসার বর্তমান সভাপতি অ্যাড. মুসা মিয়া
গণমাধ্যমকে বলেন, আমি কিছু জানি
না। যার সমস্যা তার সাথে কথা বলেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, ২০১৮সালের বিধি মোতাবেক কেউ ৩৫ বছরের উর্ধে এবং ৬০ হলে চাকরি করার নিয়ম নেই। তবে এমন অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই।