চিকিৎসা অবহেলায় পাইকগাছা হাসপাতালে সাহারিয়া মোস্তফা শুভ নামে ৭ম শ্রেণির এক মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। জ্বর ও বমির কারণে বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার স্বজনরা তাকে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।
প্রথমত জুরুরী বিভাগে সহকারী মেডিকেল অফিসার পিংকু কুমার দাশ তার চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করে নেন। পরিবারের অভিযোগ,রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারও নার্সদের ব্যাপক ডাকাডাকি করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। সকালে লাশের সামনে স্বজনদের এমন অভিযোগময় প্রলাপে বিরক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পাল্টা শোকাহত পরিবারকে থানা লকাপে ঢুকানোর হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষে।
ঘটনায় হাসপাতাল এলাকায় সকালে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না ও থানা অফিসার ইনচার্জ এমদাদল শেখ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ আজাদের পুত্র শহীদ কামরুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাহারিয়া মোস্তফা শুভ কে (১২) জ্বর ও বমির কারণে বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার স্বজনরা পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।
পরিবারের অভিযোগ,সে সময় জুরুরি বিভাগে সহকারী মেডিকেল অফিসার পিংকু কুমার দাশ চিকিৎসা দিয়ে তাকে ভর্তি করেন। এ সময় মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সুজন কুমার সরকারের ডিউটি থাকলেও তিনি হাসপাতালে অভ্যন্তরে ছিলেন না। ভর্তির পর ডিপ্লোমা নার্স সুপ্রিয়া ও টুম্পা দায়িত্বে ছিলেন ওয়ার্ডে।
এমন অবস্থায় রাত ১২ টার পরে শুভর জ্বর ও বমি বেড়ে গেলে তার পিতা-মাতা ডাক্তারদের খুঁজে না পেয়ে রাত ১ টার দিকে ওয়ার্ডের রুমে স্ব স্ব চেয়ারে বসে ঘুমন্ত নার্স সুপ্রিয়া ও টুম্পা শরণাপন্ন হন। এসময় নার্সদের ডেকে তুললে তারা ডাক্তার নাই বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এসময় শুভর পিতা-মাতা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএসএফও) ডা. মারুফ হাসানের মোবাইলে যোগাযোগ করলেও তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পায় বলে অভিযোগ করেন। শেষ পর্যন্ত শুভ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টায় পাশে অবস্থানরত পিতা আব্দুস সামাদ আজাদকে ৩ বার আসসালামু আলাইকুম দিয়ে মৃত্যু বরণ করে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পিতা-মাতা। সকালে তাদের আহাজারীতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
খবর পেয়ে সকালে শুভর স্বজনরা হাসপাতালে ভীঁড় জমায়। এসময় উপস্থিত মৃতের স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে ডাক্তার সুজন হাসপাতাল থেকে সটকেপড়েন। খবর পেয়ে থানা ওসি(তদন্ত) রহমত আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ডা. সুজন কুমার সরকার জানান, শুভর চিকিৎসার কোন অবহেলা করা হয়নি রাত সাড়ে ১১ টার সময় হাসপাতালে আসলে তাকে আমি চিকিৎসা দেই এবং ভোর ৫ টায় তার অবস্থা অবনতি হলে আমি যেয়ে সুচিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করি। ইউএসএফও ডাঃ মারুফ হাসানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বলেও জানান তিনি।
ডা. মারুফ হাসান জানান, শুভর পিতা তার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি,সে মিথ্যা বলেছে তাই তাকে থানার ওসি ও পুলিশ দিয়ে ধরে লকাপে ঢুকিয়ে রাখবে বলে স্বীকার করেন।
শুভর নিকট আত্মীয় রাড়ুলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন,ডাক্তারদের অবহেলার কারনে মেধাবী এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে এর বিচার হওয়া প্রয়োজন। ওসি (তদন্ত)রহমত আলী বলেন এ বিষয় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে শুভর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।