সরকার দেশে বড় অবকাঠামো খাত নির্মাণে সৌদি আরব থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে।
এ বিনিয়োগের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এবং পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে সরকার।
সূত্র মতে, সৌদি আরবের বিনিয়োগ আনতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ বিষয়ে গঠিত নির্বাহী মনিটরিং কমিটি।
সৌদি আরবের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর পরিষ্কার ধারণা দিতে একটি কনসেপ্ট নোট চূড়ান্ত করে এনেছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এই কনসেপ্ট নোটের ওপর আলোচনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ প্রায় (প্রতি ইউএস ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, সৌদি আরবের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর পরিষ্কার ধারণা দিতে একটি কনসেপ্ট নোট চূড়ান্ত করে এনেছে বিডা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় এই কনসেপ্ট নোট সৌদি সরকারের কাছে তুলে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সৌদি বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নির্বাহী মনিটরিং কমিটির তিনটি সভা এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই সৌদি আরবের বিনিয়োগ দেশে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, সৌদির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের ২৫০ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল অর্থনীতি নির্ভর এই দেশটি। মূল লক্ষ্য, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ।
এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নিয়ে সৌদি আরবের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিকতা, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে রোডম্যাপ গ্রহণ, বিনিয়োগে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা, ভিশন-২১ এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যমাত্রার মতো কর্মসূচিতে আকৃষ্ট হয়েছে সৌদি আরব।
বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সেবা ও উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে বিনিয়োগ করতে চায় মধ্যপ্রাচ্যেও প্রভাবশালী এই দেশটি।
জানা যায়, চলতি রমজানেই সৌদি আরব সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌদি বাদশা ও প্রিন্স সালমান।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-সংক্রান্ত চুক্তিগুলো দ্রুত কার্যকরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে দ্রুতগতির রেলসংযোগ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব। এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যে রেলপথ আছে, সেখানে দ্রুতগতির রেল এই লাইন ব্যবহার করতে পারবে না। তাই নতুন করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া সৌদি আরবের অর্থায়নে ঢাকা-বরিশাল-পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত দ্রুত গতির রেলপথ স্থাপন করা হবে। বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকো বাংলাদেশে তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান করবে। এই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত এলএনজি দিয়ে পাওয়ার প্ল্যান্ট করা হবে।
সৌদি আরবের এসএএলআইসি কোম্পানি, এসএবিআইসি কোম্পানি, মাদান কোম্পানি, আল-ফানার কোম্পানি, আল-বাওয়ানি কোম্পানি, আল সালাম এয়ারক্রাফট কোম্পানি, রিয়াদ ক্যাবলস গ্রুপ, ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।
তাছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে দুটি সৌদি কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তারা বায়োমেডিকেল প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করবেন। তারা ময়মনসিংহ ও জামালপুরে বাংলাদেশি টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচের অন্যান্য দেশে নিয়োগের সুযোগ করে দেবে।
বিমান চলাচল খাতে রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও অন্যান্য সেবা অবকাঠামো তৈরিতে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে। লালমনিরহাটে এই সার্ভিস সেন্টার তৈরি করা হবে এবং উড়োজাহাজের সেবায় এটা আন্তর্জাতিক মানের একটি ফ্যাসিলিটি হবে।
এছাড়াও ১০ কোটি ডলারের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প ফেনীতে করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।