আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, শনিবার। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। বাঙালির আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকা চির বিদ্রোহী এ কবির ১২০তম জন্মজয়ন্তী।
কি প্রেম, কি দ্রোহ—তাঁর মতো কেউ বলেনি এতটা দরদ দিয়ে। তাঁর গান, কবিতা শুধু বাঙালিকে আনন্দই দেয়নি, লড়াই-সংগ্রামে জুগিয়েছে অনুপ্রেরণা। যেখানেই অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অসাম্য—সেখানে উচ্চারিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের নাম।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তাঁর ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়।
কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল। তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তাঁর কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
কোমল আর কঠিনে মেশানো এক অপূর্ব ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমে পূর্ণ, বেদনায় নীল। আবার প্রতিবাদে ঊর্মিমাতাল। তিনি আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎসও। বাংলার মানুষের সবচেয়ে কাছের, প্রাণের মানুষ তিনি। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। পরে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাণী ও কর্মসূচি : নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সরকারি-বেসরকারি চ্যানেল ও রেডিওস্টেশনগুলো প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ‘নজরুল-চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে সরকারিভাবে বাংলাদেশে নজরুলের স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ত্রিশালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ আয়োজনে ‘নজরুল-চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্মারক বক্তৃতা করবেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।