‘জীবনে ব্যর্থতা, একটাও কবিতা লিখতে পারিনি’

স্টাফ রিপোর্টার

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আমার লেখা প্রবন্ধ ৩৫টি। তবে, বহু চেষ্টা করেও জীবনে একটা কবিতা লিখতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা।

শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনের বাতিঘরে অনুষ্ঠিত লেখক-পাঠক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

আবদুল মুহিত বলেন, আমি প্রবন্ধ লিখেছি। এটা লিখতে অনেক সময় লাগে, বিষয় ঠিক করতেও সময় লাগে। প্রবন্ধ মানেই হচ্ছে গবেষণা। সব বিষয়ে সবসময় তথ্যও পাওয়া যায় না। ৮৫ বছর বয়স পর্যন্ত একই স্পিডে ভয়ংকর ব্যস্ত জীবন পার করেছি। ফলে খুব বেশি লেখালেখি করতে পারিনি। তবে মনে হয়, এত ব্যস্ততার মধ্যেও যে ৩৫টি প্রবন্ধ লিখেছি, তা কম নয়। কারণ, আমার প্রতিটি লেখাই অনেক কষ্ট করে লেখা, অনেক গবেষণার ফসল।

সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি লেখালেখি শুরু করি যখন আমার বয়স ১০ বছর। ১৯৪৪ সালে একটি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে আমার লেখালেখি শুরু। পরবর্তীতে, ব্যাপকভাবে লেখা শুরু করি ১৯৪৬-৪৭ সালে। সিলেটে ১৯৩০ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত প্রথমে সাপ্তাহিক, পরে দৈনিক যুগভেরী পত্রিকার সম্পাদক আমাকে পত্রিকাটির অর্ধেক দিয়ে দেন লেখালেখির জন্য। আমি তখন পত্রিকাটির কিশোর মজলিশ নামের পাতায় লিখতাম। অর্ধেক পত্রিকায় লেখার জন্য কার কাছে যাবো, কী করবো? তার থেকে আমি নিজেই বিভিন্ন নামে নানা ধরনের গল্প লিখতাম, শুধু কবিতা ছাড়া। কবিতা লিখতো আমার এক ছোট ভাই।

মুহিত বলেন, ১৯৫১ সালে আমি ঢাকায় চলে আসি। এর আগ পর্যন্ত জীবনের ১৭টি বছর সিলেটেই কাটিয়েছি। ঢাকায় এসে পায়ে হেঁটে অনেক ঘুরেছি। মুড়ির টিন বাসে ঘুরেছি। ১৯৫২ সালে সংবাদ পত্রিকায় ‘ইরানের তেল’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখি। ইংরেজি অবজার্ভার পত্রিকাতেও লিখতাম।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা অনেক ভালো ছিল। দ্বিতীয়বর্ষে থাকতেই ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করি। মুসলিম হলের নির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক হই। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল। সেসময় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার্ষিক ম্যাগাজিন বের করতাম। তাতে শিক্ষকরাও লেখা দিতেন।

নিজের অভিনয় জীবনের কথা কথা উল্লেখ করে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটকে একটা ভূমিকায় অভিনয়ে সিলেকশনের জন্য যাই। স্কুলে থাকতে নাটক করেছিলাম। তবে এখানে নাটকের সিলেকশনে ফেল করি। সেই যে ফেল করেছি, আর কোনোদিন অভিনয়ের ধারে-কাছে যাইনি। কিন্তু সেই থেকেই নাটকের অর্গানাইজার হয়ে যাই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা কামাল বলেন, আমি নিয়মিত লেখালেখি করি ১৯৯১ সাল থেকে। প্রতিদিনই লেখি। সবসময় চেয়েছি, কাজ করলে বড় কাজই করবো। আমার অধিকাংশ বই ইতিহাসভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প-উপন্যাস। ইতিহাসের বই থেকে ইতিহাস জানা যায়, তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটা কাঠখোট্টা বিষয় মনে হতে পারে। আমি মনে করি, ইতিহাস যদি স্ট্রাকচার হয়, আর তাতে যদি রক্ত-মাংস, জীবন দেওয়া যায়, তাহলে এটি কথা বলতে পারে। ইতিহাসবিদ ইতিহাস রচনা করেন, কিন্তু একজন সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক ইতিহাসকে প্রাণ দেন। তখন ইতিহাস কথা বলে, হাঁটতে শেখে। ইতিহাস তখন সত্যের জায়গায় চলে যায়।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি তরুণেরা যেভাবে গল্প-উপন্যাস পড়ে, সেভাবে ইতিহাসের বই পড়ে না। তাই, তারা ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস-গল্প পড়তে পারে। একটা সময় ছিল, টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা যেত না। ইতিহাস সঠিক ধারায় না হাঁটলে, ভুল ইতিহাস একটা প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়। সে কারণেই আমরা দেখি, হুমায়ুন আহমেদ তার নাটকে তোতাপাখির মুখ দিয়ে ‘তুই রাজাকার’ বলিয়েছেন। একজন লেখক যদি ভবিষ্যৎ না দেখতে পারেন, তাহলে আমি মনে করি, তিনি উঁচু পর্যায়ের কোনো কাজ করতে পারবেন না।

ইতিহাসভিত্তিক সাহিত্যচর্চা লেখক পাঠক সংলাপের আয়োজন করে ঢাকা ইনিশিয়েটিভ। সহযোগিতা করে অয়ন প্রকাশন। সংলাপটি পরিচালনা করেন সাংবাদিক নুহ আবদুল্লাহ।

সংলাপে আরও অংশ নেন সাহিত্যিক ও অধ্যাপক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ঔপন্যাসিক ইসমাইল হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশিদ, কবি রোকন জহুর, লেখক আরিফ খন্দকার। এছাড়া, পাঠক হিসেবেও অনেকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এসময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে তাদের বই উপহার দেওয়া হয়। এছাড়া, সব পাঠকদেরও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে