এবার ধান নিয়ে কৃষকদের সঙ্কটের জন্য সরকারের নীতিকে দায়ী করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিতের জন্য ধান কেনায় ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন সাবেক এই কৃষি প্রতিমন্ত্রী।
এবার বোরো আবাদ করে উৎপাদন খরচ উঠছে না কৃষকের। এর ফলে কৃষকদের অসন্তোষের মধ্যে নানা পদক্ষেপ নিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে।
ফখরুল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কৃষকদের বর্তমানে যে দুরবস্থা, তা সরকারের ভুল নীতির প্রতিফলন। চাল আমদানির কারণেই কৃষকরা ন্যায্যমূল পাচ্ছেন না।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, দেখুন, সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী দেশ খাদ্যে বিশেষ করে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে চাল উপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ৬২ লাখ মেট্রিক টন। অথচ এই সময়ে সরকারি চ্যানেলে বা ব্যবস্থায় খাদ্য শস্য আমদানি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৭ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ একদিকে বলা হচ্ছে যে, আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে চাল।
তিনি বলেন, এই আমদানি করা হয়েছে শুধু তাদের (ক্ষমতাসীন) সুবিধাভোগীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।
এছাড়া সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান না কিনে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘পকেট ভারী’ করার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
চাল আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, সরকারের অংশীদার একটি দলের প্রধান, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও এই দুর্নীতির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারি দলের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনও এহেন পরিস্থিতির জন্য এই সরকারের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে দায়ী করেছেন।
উৎপাদন খরচ না ওঠায় মাঠের পাকা ধানে কৃষকের আগুন দেওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভিন্ন সন্দেহের সমালোচনাও করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বিভিন্ন রকমভাবে এটার সঙ্গে আবার বিএনপিকে জড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এর আগেও একদিন বলেছিলাম, আসলে বিএনপি হ্যাজ বিকাম এ নাইটমেয়ার ফর দেম। উঠতে বসতে শয়নে-স্বপনে তারা সবখানেই বিএনপির ভুত দেখতে পায়।
ফখরুল বলেন, ধান চাষিদের চাওয়া হচ্ছে, সরকার ন্যায্য মূ্ল্যে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করুক। আমরা তাদের এই দাবির সাথে একমত। সরকার কৃষকদের ন্যায্য দাবির কথা কানেও নিচ্ছে না।
কৃষকদের বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে বিএনপির পক্ষ থেকে ১১টি প্রস্তাব তুলে ধরেন ফখরুল।
এগুলো হচ্ছে, ধান কেনায় ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ, প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেত মজুরদের বি্শেষ সুদবিহীন ঋণ প্রদান, কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে তিন মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান, সরকারি পর্যায়ে ধান-চাল সংরক্ষণে প্রয়োজনে বেসরকারি গুদাম ভাড়া করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে চাল বিতরণ বাড়ানো, সরকারদলীয় কর্মীদের ধান কেনার অনুমতি বাতিল করা, ধান উপাদন সম্পর্কে সরকারি সঠিক তথ্য প্রদান, মৌসুমের আগেই ধান সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা, ধান-চাল সংগ্রহের পরিমাণ কমপক্ষে বোরো উৎপাদনের ১৫ শতাংশ করা।
- আরও পড়ুন, আওয়ামী লীগে বঞ্চিতদের ভাগ্য খুলছে
বিএনপি মহাসচিব দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণ গ্রহিতাদের জন্য সরকার বিশেষ ছাড় দিয়েছে, যদিও এই ছাড় মহামান্য হাই কোর্ট আটকে দিয়েছে। ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফে কোনো পদক্ষেপ নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকার ব্যাংক লুটপাটকারীদের দুধ-কলা দিয়ে পুষছেন। অথচ এই খেলাপি ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে সরকার আরও ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কৃষি বিষয়ক সহ-সম্পাদক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক, কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, কেন্দ্রীয় সদস্য ইব্রাহিম খলিল, শামসুজ্জামান।