রাজধানীর যানজট পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে সরকারের বাস্তবায়নাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে অর্থায়নের অনিশ্চয়তা সংকট কেটেছে। ফলে গতি পাচ্ছে বহুলকাঙ্ক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ।
সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) প্রকল্পটি।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অর্থায়ন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা কেটে গেছে। ফলে দ্রুত সময়েই কাজ শেষ হবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরেই শেষ হবে এই মেগা প্রকল্পের কাজ।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজের অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো। চলতি বছরের নভেম্বরে এ ধাপের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) অধীন সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানির (ইতাল থাই) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও অর্থায়ন করছে ব্যাংককভিত্তিক বহুজাতিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
নির্মাণ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরও প্রকল্প এলাকা বুঝে না পাওয়া, ইউটিলিটি লাইন অপসারণ-পুনঃস্থাপন সম্পন্ন না হওয়ার অজুহাতে দীর্ঘদিন কাজই শুরু করছিলো না ইতাল থাই কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ব্যাংকক সফরে গিয়ে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপরই কাটে অর্থায়ন সংকট। কিন্তু কিছু সময় পর আবারও একই সংকটে পড়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে প্রকল্পটি।
সেতুমন্ত্রী কাদেরের ভাষ্যে, এবারও সে সংকট কেটে গেলো।
এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এর মূল লাইনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। আর ৩১টি র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পে উড়াল সড়ক তৈরি হচ্ছে মোট ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা ও ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিংয়ে (ভিজিএফ) ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৪১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সাড়ে তিন বছরের নির্মাণ সময়সহ (কনসেশন পিরিয়ড) ২৫ বছরে বিনিয়োগ তুলে নেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইতাল থাই।
তিন ধাপে কাজ ভাগ করে নির্মিত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথম ধাপে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৩০ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ধাপে মগবাজার রেলক্রসিং থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
প্রকল্পটির মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর। চলতি বছরের নভেম্বরে প্রথম ধাপ, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ধাপ ও ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় ধাপের কাজের মাধ্যমে প্রকল্পটি শেষ করার কথা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের।
সেতু বিভাগের দেওয়া হিসাব মতে, এ প্রকল্পে ২০৮ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপের ৬২ একরের অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। জমিতে অবস্থিত অবকাঠামো অপসারণ করে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের অধিগ্রহণের কাজও শেষ। এখন চলছে স্থাপনা অপসারণের কাজ। সময়মতো এ কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বিনিয়োগকারীকে।
প্রথম ধাপের ইউটিলিটি অপসারণ ও পুনরায় স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ও শেষ ধাপের ইউটিলিটি অপসারণ ও প্রতিস্থাপনের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজও চলছে। এরইমধ্যে প্রথম ধাপের কাজে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শেষ হয়েছে। বাকিদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ চলমান আছে।
অন্যদিকে চলছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ভবন নির্মাণের কাজও। উত্তরা তৃতীয় ফেজ সংলগ্ন বাউনিয়া, বড় কাকড় ও দ্বিগুণ মৌজায় বহুতল বিশিষ্ট ভবন ও অন্যান্য সুবিধা নির্মাণ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য। এরমধ্যে ভবনের পাইল কাস্টিং ও পাইল ড্রাইভিং শেষ হয়েছে। গ্রেট বিম, ফ্লোরসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণও কাজ চলছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩৩৩টি পাইল, ৩০০টি পাইল ক্যাপ, ৭৯টি ক্রস বিম, ১৮৭টি সম্পন্ন কলাম, ১১৯টি আংশিক সম্পন্ন কলাম, ১৮৬টি আই গার্ডার নির্মাণ শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে ১৪টি স্প্যানে আই গার্ডার স্থাপনের কাজও।