মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের দখলদার উচ্ছেদে ফোর্স দিতে পুলিশের অনীহা

মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার
মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার । ছবি - সংগৃহিত

পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার থেকে অমুক্তিযোদ্ধা ও দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছে না মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অসহযোগিতার অভিযোগ এনে বলেছে, পুলিশ উচ্ছেদ অভিযানে ফোর্স দিতে অস্বীকার করেছে। তারা সরকারের ও আদালতের আদেশ অমান্য করছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট জবাব চাইবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে গজনবী রোডে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য এই টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা এই ভবনের দেখভাল করছেন।

জোরপূর্বক দখলে ১২টি ফ্ল্যাট

কল্যাণ ট্রাস্টের তদন্তে বের হয়ে এসেছে, টাওয়ারের ফ্ল্যাট ও দোকান মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট যাঁদের বরাদ্দ দিয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নন। ভবনটিতে ৮৪টি ফ্ল্যাট ও ৭৪টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ফ্ল্যাট জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন ১২ ব্যক্তি। তাঁরা একটি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন। আরও একটি করে নিজেদের দখলে রেখেছেন। অনেকে আছেন অমুক্তিযোদ্ধা, অনেকে যুদ্ধাহত নন। আবার বরাদ্দপ্রাপ্তদের ১০ জন সরকারের কাছ থেকে অন্য জায়গায় বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি নিয়েছেন। গত পাঁচ বছরে ৩৩ জনকে এবং গত সেপ্টেম্বরে ২০ জনকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের ফ্ল্যাট ও দোকান অবৈধভাবে দখলের বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্ত করে যাঁরা অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখল করে রেখেছেন, তাঁদের উচ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুলিশ কেন সহযোগিতা করতে চাইছে না, বুঝতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করব।’

দফায় দফায় চিঠি দিলেও ফ্ল্যাট ছাড়ছেন না তাঁরা

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা বলেন, ভবনের দখলদার, অমুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত নন, এমন ব্যক্তিদের দফায় দফায় চিঠি দিলেও তাঁরা ফ্ল্যাট ছাড়ছেন না। ফলে প্রকৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা ফ্ল্যাটে উঠতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব তোফাজ্জল মিয়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিবকে চিঠি পাঠান।

উচ্ছেদ সম্পর্কে পুলিশের চিঠি

দখলদার উচ্ছেদের জন্য ফোর্স চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার সাহেদ আল মাসুদ দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী হাকিমকে গত ২৩ এপ্রিল চিঠি দিয়ে জানান, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তাঁদের ১ হাজার ১২২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা। কিন্তু তাঁদের ৮৫০ বর্গফুট দিয়েছে। তাই তাঁরা অবশিষ্ট অংশ বুঝে পেতে আরেকটি ফ্ল্যাট দখলে রেখেছেন। এ নিয়ে একটি রিট মামলা রয়েছে। এ ছাড়া দখল কার্যক্রম চালানো হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। একই মতামত জানিয়ে ২৪ এপ্রিল চিঠি পাঠান ঢাকা মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

বিস্মিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়

পুলিশের এমন চিঠিতে বিস্মিত হন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ট্রাস্টের কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, পুলিশের কাজ সরকারকে সহযোগিতা করা। তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে সহায়তা করতে বলা হয়েছে। ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে ৭ মে চিঠি দিয়ে জানান, ১ হাজার ১২২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের ৮৫০ বর্গফুট দেওয়া হয়েছে—এটি চরম মিথ্যাচার। নিয়ম অনুযায়ী দেয়াল, কার্নিশ, বারান্দা, কমন স্পেস, লিফটসহ পরিমাপ করে এ ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত ও ফ্ল্যাটের পদ্ধতিকে উপেক্ষা করে দম্ভ ও হঠকারিতার সঙ্গে দখলদারদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন। ইফতেখারুল ইসলাম আরও বলেন, যে রিট মামলার কথা বলা হচ্ছে, তা ফ্ল্যাটের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা তো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিষয়। পুলিশ কেন এ বিষয়ে তাদের মতামত দেবে? তারা উচ্ছেদ কার্যক্রমে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে নিরাপত্তা দেওয়া। সেটাই তো করা উচিত। বিষয়টি এত দিন আমার কাছে আসেনি। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে