প্রসব জটিলতায় বছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার মায়ের মৃত্যু

বিশেষ প্রতিনিধি

আজ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘মর্যাদা ও অধিকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি সেবায় অঙ্গীকার।’ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্বকালীন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মায়ের অনুভূতি, পছন্দ, গোপনীয়তা, ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আন্তরিক সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বারোপ করেন।

গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার নারীর মৃত্যু হয় এবং ২৬ লাখ মৃতজন্মসহ ৩০ লাখ নবজাতক অকাল মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন ৮৩০ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ হাজার ৪৭৫ জন মা এবং প্রতিদিন প্রায় ১৫ জন মা মৃত্যুবরণ করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের চেয়ে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এর নিচে নামিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বর্তমানে দেশে প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে ১৭২ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে ১৭৬ জন। বর্তমানে ৩৭ ভাগ মা কমপক্ষে চারটি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করে থাকে। দেশে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৪৭ শতাংশ। প্রসবের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণের হার ৩২ শতাংশ।

মোট মাতৃমৃত্যুর ৭৩ শতাংশই ঘটে প্রসব-পরবর্তী সময়ে। যাদের ৫৬ ভাগই মারা যায় প্রসবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এসব মাতৃমৃত্যুর ৩১ শতাংশই ঘটে রক্তক্ষরণের কারণে। ২৪ ভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী খিঁচুনি বা একলাম্পশিয়া। এছাড়া ৩ শতাংশ মায়ের মৃত্যু ঘটে বাধাগ্রস্ত বা অবিরাম প্রসব ব্যথার কারণে। মোট মাতৃমৃত্যুর ৫৩ ভাগই ঘটে থাকে বাড়িতে প্রসবের কারণে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাতৃমৃত্যুর প্রধান দুটি কারণের একটি রক্ষক্ষরণ, অন্যটি একলাম্পশিয়া। এই দুটি কারণ সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য। গর্ভপাতের কারণে মাতৃমৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণেও মাতৃমৃত্যু হয়ে থাকে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোট মাতৃমৃত্যুর ৫৪ ভাগ ঘটে বাড়িতে, ১৪ ভাগ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ১৪ ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে, ৬ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ৬ ভাগ জেলা সদর হাসপাতালে, ২ ভাগ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে।

এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, এমসিডব্লিউসি, এনজিও ক্লিনিক এবং হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়ার পথে ১ শতাংশ হারে মাতৃমৃত্যু হয়ে থাকে। পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, দেশের মাতৃমৃত্যুর ৫৬ ভাগই ঘটে প্রসব-পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। ১৭ শতাংশ ঘটে ৪৮ ঘণ্টা এবং ১৪ শতাংশ ঘটে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে।

এ প্রসঙ্গে অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশনা আরা বলেন, দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ রক্তক্ষরণ এবং খিঁচুনি। খুব স্বল্পমূল্যের ওষুধ দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু দেশীয় কোম্পানি এসব ওষুধ তৈরি না করায় এর প্রাপ্যতা সহজলভ্য করা সম্ভব হয় না।

এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নির্ধারিত সময়ে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. কাজী মোস্তফা সারোয়ার বলেন, মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।

তার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ানো, প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফদের মাধ্যমে প্রসব নিশ্চিত করা ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হব।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে