কনস্টেবল পারভেজের কৃত্রিম পা লাগবে ৪ মাস পর

ডেস্ক রিপোর্ট

কনস্টেবল পারভেজ
কনস্টেবল পারভেজ। ছবি - সংগৃহিত

২০১৭ সালের ৭ জুলাই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়  নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ডোবায় ডুবে যাওয়া বাসের ২০ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধারকারী সাহসী সেই কনস্টেবল পারভেজের কেটে ফেলাপায়ের জায়গায় কৃত্রিম পা সংযোজন করবে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু)। তবে কৃত্রিম পা লাগানোর উপযুক্ত হতে তার আরও ৩-৪ মাস সময় লেগে যাবে।

এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত পারভেজের পচে যাওয়া ডান পা মঙ্গলবার কেটে ফেলা হয়। এরপর তাকে কিছুক্ষণ পোস্ট অপারেটিভ বিভাগে রেখে আবারও নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র-আইসিইউতে নেয়া হয়।

পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল গণি মোল্লা আজ বুধবার বলেন, ‘আমরা গতকাল তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের পচে যাওয়া অংশ কেটে ফেলেছি। যদি পায়ের ওপরের অংশে আর কোনো সমস্যা বা ইনফেকশন না দেখা দেয় তাহলে তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে রিকোভার করে সুস্থ হয়ে উঠবে। তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। সে আপাতত ভালো আছে, স্বাভাবিকভাবে খাবার খাচ্ছে। তাকে আইসিইউতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসার সব ধরনের খরচ বহন করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

universel cardiac hospital

তিনি বলেন, ‘তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেবে। তবে কৃত্রিম পা লাগানোর জন্য তার প্রস্তুত হতে আরও তিন-চার মাস সময় লাগবে।’

বুধবার পারভেজের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা নিয়ে তার ছোট ভাই মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘সকালে ভাইয়ার (পারভেজ) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। গতকাল তার পায়ে কোনো জোর পাচ্ছিল না। আজ সকালে জোর পাচ্ছে বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন তার শরীর আগের চেয়ে ভালো। তার নিরাপত্তায় ২৪ ঘণ্টা দু’জন পুলিশ সদস্য হাসপাতালে অবস্থান করছেন। সব সরকারি ওষুধ আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাচ্ছি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নিয়মিত তাকে দেখতে আসছেন, তার কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা। তার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

এর আগে ২৭ মে সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ার জামালদি বাসস্ট্যান্ডের সামনে একটি বেপরোয়া কাভার্ডভ্যান তাকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত হন পারভেজ। একই সঙ্গে ডান পায়ের গোড়ালি ও হাতে মারাত্মক আঘাত পান। প্রথমে ‘ট্রমালিংক’র স্বেচ্ছাসেবক দল তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকার রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পঙ্গুতে চিকিৎসাধীন কনস্টেবল পারভেজের জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের চিকিৎসকরা পারভেজের জীবন বাঁচাতে তার পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। পরে পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে অস্ত্রোপচার করে তার পা কেটে ফেলা হয়।

২০১৭ সালের ৭ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চাঁদপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায় পড়ে যায়। যাত্রীসহ বাসটি ডোবায় ডুবে গেলে তৎকালীন দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের কনস্টেবল পারভেজ মিয়া ইউনিফর্ম পরেই পানিতে নেমে পড়েন এবং ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হিরো’ খেতাব পান পারভেজ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে