মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সম্পত্তি ‘গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের’ অনিয়ম ও শত কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা তদন্তে নেমেছে জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। এজন্য গঠন করা হয়েছে একটি সাবকমিটি। লোপাটের বিষয়টির তদন্ত গুরুত্ব দিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান নিজেই এই সাব কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়েছেন।
বুধবার এই সাব কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এদিকে, কল্যাণ ট্রাস্টের অপর একটি প্রকল্প চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ৭১ নং প্লটের ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে আরও একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটের অনিয়মসহ ট্রাস্টের বিভিন্ন স্থাপনা ও সম্পদের অনিয়ম কমিটি পর্যায়ক্রমে তদন্ত করবে। সংসদীয় কমিটির সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তৃতীয় বৈঠকে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের শত কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ তদন্তের জন্য সাব কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক শাজাহান খান ছাড়াও ওই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কমিটির সদস্য এ বি তাজুল ইসলাম এবং ঢাকা ৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। কমিটিতে দুই মাসের মধ্যে মূল কমিটির কাছে প্রতিবেদন দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ওই একই বৈঠকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ভবন প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে কাজী ফিরোজ রশীদকে আহ্বায়ক করে আরও একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়।
গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের অনিয়ম ঘটনা তদন্ত প্রসঙ্গে আহবায়ক শাজাহান খান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছি। বুধবার আমরা সাব কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসছি। অনিয়মের পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষ ঘটনা তদন্ত করে আমরা রিপোর্ট দেবো। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পত্তি এভাবে কেউ লুটপাট করে খাবে সেটা হতে দেওয়া যায় না। আমরা মনে করি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
কমিটির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রাথমিক ভাবে আমরা যে অনিয়ম ও লুটপাটের তথ্য পেয়েছি তা ভয়াবহ। ট্রাস্টের সম্পত্তির এই নয়ছয় মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের মনে হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই ভবনের চুক্তি থেকে শুরু করে পরতে পরতে আমরা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি।
দোকানগুলোর সঙ্গে ভাড়ার যে চুক্তি হয়েছে তা কোনোক্রমেই বাজার দর অনুযায়ী হয়নি উল্লেখ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, এগার টাকা স্কয়ার ফিট হিসেবে ১০০ স্কয়ার ফিটের একটি দোকান ভাড়া এখানে মাসে এগারোশ‘ টাকা। অথচ ওই ভবন এলাকায় ফুটপাতে কারও দোকান চালাতেও দিনে কমপক্ষে ৫০০ টাকা গুণতে হয়।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভবনে গাড়ি পার্কিং লিজ নিয়ে সেখানে দোকান তৈরি করে মাসে ৩০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হচ্ছে। অথচ পার্কিংয়ের জায়গায় কোনও স্থাপনা করা রাজউকের আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ।
জানা গেছে, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২০০১ সালে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। শুরুতেই ওই চুক্তিটি অসম ছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
চুক্তি অনুযায়ী, এখানে বিশ তলা ভবন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১০ তলা নির্মাণের পর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি পালিয়ে যায়। এর আগেই নির্মিত ৮৮৩টি দোকানের মধ্যে ৫৪০টির পজেশন বিক্রি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ওই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। গত এক দশকে বিক্রির বাইরে থাকা কমপ্লেক্সের আট তলা পর্যন্ত ৩৪৩টি দোকানও জবরদখল হয়ে গেছে। কেউ কেউ বিভিন্ন উপায়ে ট্রাস্টের কাছ থেকে এগুলোর বৈধতাও নিয়েছে। আবার কেউ কেউ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের থেকে ভুয়া বরাদ্দপত্র দেখিয়ে দখল করে আছে। নবম ও দশম তলার বরাদ্দ না থাকলেও প্রভাবশালীরা পজেশন দখল করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন।