প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোনে বিচার দিলেন আইসক্রিম বিক্রেতা

সারাদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোনে বিচার দিলেন আইসক্রিম বিক্রেতা
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোনে বিচার দিলেন আইসক্রিম বিক্রেতা। ছবি - সংগৃহিত

সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলার এক আইসক্রিম ডিলারের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে। ঐ আইসক্রিম ডিলারের নাম রফিকুল ইসলাম রফিক। তিনি কাজী ফার্ম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের প্রায় ৩০ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাতের বিচার না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন৷

রফিক প্রধানমন্ত্রীকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার কষ্টের কথা ব্যক্ত করলে, প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা গ্রহণ করার তাকে আশ্বাস দেন।

মত ও পথের পাঠকদের জন্য পুরা ফোনালাপটি তুলে ধরা হলো

universel cardiac hospital

রফিক : আসসালামুলাইকুম।

প্রধানমন্ত্রী :হ্যালো। জি। ওয়ালাইকুম সালাম। বলেন।

রফিক :আমি ময়মনসিংহ চরপাড়া থেকে মো. রফিকুল ইসলাম রফিক বলছি।

প্রধানমন্ত্রী :কোত্থেকে?

রফিক :ময়মনসিংহ চরপাড়া থেকে।

প্রধানমন্ত্রী :আচ্ছা বলেন।

রফিক :আম্মাজান, ভালো আছেন?

প্রধানমন্ত্রী :জি, ভালো।

রফিক :আম্মা, আপনে যহন ১৯৯৩ সালে গৌরীপুরের এমপি সাহেব নজরুল ইসলাম মারা গেছিন, রওশন আরা নজরুল সংসদ নির্বাচন করছিন-

প্রধানমন্ত্রী :হ্যাঁ।

রফিক :তখন আসছিলেন আপনি। তখন দেখছিলাম আপনাকে। মা বলে, পা-ও ছুঁয়ে সেলাম করছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী :জি।

রফিক :গৌরীপুর সাহেবগঞ্জে মিটিং করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী :হ্যাঁ, মিটিং করছিলাম।

রফিক :জি, মা আমি একটু কথা বলতে চাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী :বলেন।

রফিক :কাজী ফার্ম আছে যে, পঞ্চগড়ের-

প্রধানমন্ত্রী :হুঁ।

রফিক :কাজী ফার্ম আমার জীবনের সকল কিছু নিয়ে গেছে। আমি এই কোম্পানির ময়মনসিংহের সাতটি থানার ডিলার ছিলাম। তাদের কাছে আমি ২১ লাখ টাকার মতো উকিল নোটিশ করছিলাম। হিসাব করলে ৩০ লাখ টাকা আসবে। এ ঘটনাটি জানে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন এমপি, ময়মনসিংহ জেলার সেক্রেটারি মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, জেলার সভাপতি জহিরুল হক খোকা, মেয়র ইকরামুল হক টিটু সাহেব। ময়মনসিংহের ডিসি সাহেব জানেন। সেখানে অনেক সালিশ-দরবার হইছে। তারা টাকা দেয় না। আমি আইজকা অসহায়। ২৭ বছর ধরে আমি আওয়ামী লীগ করি।

প্রধানমন্ত্রী :তারা টাকা দেয় না?

রফিক :তারা টাকা দেয় না। তারা বলে, ‘আমরা টাকা দেবো না। আমাদেরই সব দোষ। আমরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। আমরা টাকা দিলে আমাদের বদনাম হবে। আমাদের মাথা নত হবে।’ আমার আটটা ফিরিজ (ফ্রিজ) চুরি করছে আম্মা। আমার ওপর এই পর্যন্ত চারবার হামলা হইছে। এই ঘটনা ময়মনসিংহের সকল প্রশাসনিক দপ্তরে জানে। আইজি শহীদুল হক স্যারে (সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক) জানে। আপনার পিএস সাজ্জাদ স্যারে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বর্তমান সচিব সাজ্জাদুল হাসান) জানে।

প্রধানমন্ত্রী :আপনার নামটা কী?

রফিক :আমার নাম মো. রফিকুল ইসলাম রফিক।

প্রধানমন্ত্রী :আচ্ছা, আমি দেখি। শহীদুল হককে বলে দেখি। তাদের কী করা যায়। টাকা পাইলে অবশ্যই টাকা দিতে হবে।

রফিক :তারপর আমার আটটা ফ্রিজও চুরি করাইছে। তিনটা ফ্রিজ কোর্টের রায়ে ফিরত পাইছি। মামলাটা করাতে তারা গুণ্ডা সন্ত্রাসী লাগাইছে। আমি বাসা থাইকা বাইর হইতে পারি না। চরপাড়ায় আমার বাসা। এই ঘটনার অনেক সাক্ষী রয়েছেন। এই যে যাদের নাম বললাম…। তারা বলেন, ‘তারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। আমরা বিচার করতে পারব না।’

প্রধানমন্ত্রী :এটা কথা হইল নাকি? টাকার মালিক হইছে দেইখা কী হইছে।

রফিক :এরপর আম্মা হুনেন। তারা বিএনপিপন্থি কোম্পানি। এটাও খবর হইছে। তারপরও বিচার করে না। সবাই আমার বাসায় আসছে। এ ঘটনা শুইনা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী :আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি দেখতেছি।

রফিক :আম্মা, একটু দয়া করেন।

প্রধানমন্ত্রী :আপনি আমার পিএস সাজ্জাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি বলে দিবোনে। দেখি কী করা যায়।

রফিক :উনার কাছে তো আমি, উনার বাড়ি পর্যন্ত গেছি। দুই দিন আমি রেল ইস্টিশনে বইয়া থাইক্ক্যা উনার সঙ্গে দেখা কইরা, উনার পাও ধইরা কানছি। উনি কথা বলে নাই।

প্রধানমন্ত্রী :কে? সাজ্জাদ?

রফিক :জি।

প্রধানমন্ত্রী :আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি সাজ্জাদের সঙ্গে কথা বলব। দাঁড়ান।

রফিক :আম্মা, আমাকে একটু দয়া করেন।

প্রধানমন্ত্রী :আচ্ছা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে