পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার বাংলাদেশ ৬৩ শতাংশ কমিয়ে এনেছে বলে জানিয়েছে সেইভ দ্য চিলড্রেন।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি প্রকাশ করেছে বার্ষিক ‘গ্লোবাল চাইল্ডহুড রিপোর্ট ২০১৯’, যাতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সেইভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল প্রগ্রেস র্যাঙ্কিংয়ে গত ২০ বছরে বাংলাদেশ ১৫৩ পয়েন্ট এগিয়েছে।
চাইল্ডহুড ইনডেক্সে বাংলাদেশ এবারের স্কোর ৭২৮ পয়েন্ট। ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশর অবস্থান ১২৭। ২০০০ সালে স্কোর ছিল ৫৭৫ পয়েন্ট।
১ হাজারকে ভিত্তি মান ধরে সেই দ্য চিলড্রেন বিশ্বের ১৭৬টি দেশে গত ২০ বছরে শিশু মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেইভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নান, হেলথ নিউট্রিশান অ্যান্ড আইচআইভি ডিরেক্টর শামিম জাহান, নিউমোনিয়া সেন্টেনারি কমিটমেন্ট অ্যাডভাইজর সাব্বির আহমেদ।
স্থানিক পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে সেইভ দ্য চিলড্রেন কাজ করেছে বলে জানান ইশতিয়াক মান্নান।
তিনি বলেন, এমডিজি এজেন্ডা বাস্তবায়ন, সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, সামাজিক বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি, উন্নত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, অসমতা দূরীকরণ, উন্নয়ন সহযোগিতা, নারী ও কন্যা শিশুর ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্ব,নতুন প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়াকে এবার ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে দেখেছে সেইভ দ্য চিলড্রেন।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, শতকরা হিসেবে গত ২০ বছরে শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ।
এবারের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্লোবাল প্রগ্রেস র্যাংকিংয়ের প্রথম দিকে রয়েছে সিঙ্গাপুর, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে। সিঙ্গাপুরের পয়েন্ট ৯৮৯, সুইডেন ৯৮৬, ফিনল্যান্ড ও নরওয়ের পয়েন্ট ৯৮৫।
বিশ্বের কয়েকটি দরিদ্রতম দেশে সবচেয়ে নাটকীয় অগ্রগতি হয়েছে, যেমন সিয়েরা লিওনে ২০০০ সাল থেকে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন ঘটেছে এবং এর পরই রয়েছে রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া ও নাইজার। সিয়েরা লিওনের পয়েন্ট ৫৯১।
তালিকায় তলানির দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক,চাঁদ রিপাবলিক ও নাইজার।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল গত দুই দশকে শিশু মৃত্যুর সংখ্যায় অনেক কমাতে পেরেছে। এই চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে।
এই সময়ে ভুটানের শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ৬০ শতাংশ, নেপালে ৫৯ শতাংশ এবং ভারতে ৫৭ শতাংশ।
সেইভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে পাঁচ বছর বয়সের কম বয়সী শিশু মারা যাচ্ছে ৩২.৪ শতাংশ, শূন্য থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩৬.১ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির রয়ে যাচ্ছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে ১৭.৪ শতাংশ শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪.৩ শতাংশ শিশুকে শ্রমবাজারে যুক্ত হতে হচ্ছে।
১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ের হার ৩২.৪ শতাংশ, সেই বয়সী মেয়েদের মধ্যে হাজারে ৮৪.৪ জন কন্যাশিশু সন্তানের জন্ম দেন।
১ জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবসকে সামনে রেখে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল চাইল্ডহুড রিপোর্ট’ এ ‘এন্ড অফ চাইল্ডহুড ইনডেক্স’ দেখা যায় ২০০০ সাল থেকে ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১৭৩টি দেশে শিশুদের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেছে।
ইশতিয়াক মান্নান বলেন, গ্লোবাল ইনডেক্সে বাংলাদেশের অগ্রগতির বড় কারণ এমডিজির গোলগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারা। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, তার বাস্তবায়ন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস। এছাড়াও নারী নেতৃত্ব বা ক্ষমতায়নে অগ্রগতি, নতুন প্রযুক্তি, স্যোশাল মিডিয়ায় পজিটিভ কন্ট্রিবিউশন ও শিশু সুরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিও এখানে ইন্ডিকেটর হিসেবে কাজ করেছে।