মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার মামলা অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফেনীর সোনাগাজী আমলী আদালতের বিচারক জাকির হোসেন এ মামলার পরবর্তী তারিখ ঠিক করে দিয়েছেন ১০ জুন। সেদিনই আলোচিত এ মামলাটি অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ট্রাইবুনালে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত গত ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম বুধবার একই আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে এ মামলায় ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর ও মাদ্রাসার প্রভাষকও রয়েছে আসামির তালিকায়।
এছাড়া এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। আর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানোর অভিযোগে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাকে মামলায় আসামি করা হয়নি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম থেকে হত্যার ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালান। কিন্তু তাকে আসামি করা হয়নি।
তিনি বলেন, অভিযোগপত্রের শুনানির দিন আইনজীবীরা পিবিআইর কাছে জানতে চাইবেন কেন তাকে আসামি করা হয়নি। প্রয়োজনে মামলার বাদী নুসরাতের ভাই নোমানের সঙ্গে আলাপ করে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি জানানো হবে।
মামলার ১৬ আসামি হলেন- সোনাগাজীর চরকৃষ্ণজয়ের কলিম উল্যাহ সওদাগার বাড়ীর কলিম উল্যার ছেলে এসএম সিরাজ-উদ-দৌলা (৫৭), চরচান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মো. আহসান উল্যাহর ছেলে নুর উদ্দিন (২০), চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ভূইয়া বাজারে এলাকার নবাব আলী টেন্ডল বাড়ী মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক) ও চরগণেশ গ্রামের পান্ডব বাড়ীর আহসান উল্যাহ ছেলে মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ আল কাউন্সিলর (৫০), পূর্ব তুলাতলী গ্রামের খায়েজ আহাম্মদ মোল্লা বাড়ীর আবুল বাশারের সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের সৈয়দ সালেহ আহাম্মদের বাড়ীর রহমত উল্যাহ ছেলে জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ (১৯), সফরপুর গ্রামের খান বাড়ীর আবুল কাশেমের ছেলে হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ও উত্তর চারচান্দিয়া গ্রামের সওদাগর বাড়ীর ইবাদুল হকের ছেলে আবছার উদ্দিন (৩৩), চরগণেশ গ্রামের আজিজ বিডিআর বাড়ীর আব্দুল আজিজের (পালক বাবা) মেয়ে কামরুন নাহার মনি (১৯), লক্ষীপুর গ্রামের সফর আলী সর্দার বাড়ীর শহিদুল ইসলামের মেয়ে উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা (১৯), পূর্ব চরচান্দিয়া গ্রামের সোজা মিয়া চৌকিদার বাড়ীর আব্দুল শুক্কুরের ছেলে আব্দুর রহিম শরীফ (২০), চরগণেশ গ্রামের হাজী ইমান আলীর বাড়ী ওরফে মালশা বাড়ীর জামাল উদ্দিন জামালের ছেলে ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), চরগণেশ গ্রামের এনামুল হকের নতুন বাড়ীর এনামুল হক ওরফে মফিজুল হকের ছেলে ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), তুলাতলী গ্রামের আলী জমাদ্দার বাড়ীর সফি উল্যাহ ছেলে মোহাম্মদ শামীম (২০), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চরচান্দিয়া গ্রামের ভূইয়া বাজার এলাকার কোরবান আলী বাড়ীর কোরবান আলীর ছেলে রুহুল আমিন (৫৫), উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বোর্ড অফিস সংলগ্ন রুহুল আমিনের নতুন বাড়ীর মো. রুহুল আমিনের ছেলে মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
এ মামলায় এজাহারভুক্ত আটজনসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। তাদের মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১২ জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।