জীবনানন্দ ও বহুবিধ হিপোক্রিট শ্বাস

রাশা নোয়েল

প্রকৃতি পরিচয়

প্রকৃতি পরিচয় শুনি মানুষের কাছে, মানুষের একান্ত
কথাগুলি প্রলয়ঙ্করী হয়ে যায়, হতে পারে জেনে
এইসব দুর্যোগে ঘরে ফিরি ধীরে।
ঘরে ফিরি, দু’হাতে সিডর-শামুক-ঝিনুক নিয়ে
শার্টের কলারে কলার কাঁদি, ঘানিভাঙা তেল
অথবা শস্যের অনাগত বৈভব, যতদূর যেতে পারে
নিজস্ব মানুষের ধানক্ষেত- আমরুলী- মহিশান বাড়ি
নিয়তির মত ভাঙাচোরা দেহের স্পিরিচুয়াল- শ্বাশত গ্লানি?

কে দিতে পারে- ডেকে আনো, কথা বলি তার সাথে
কয়েকটি মহাদেশ চোখে ক’রে নিয়ে নাকি দাঁড়িয়ে আছে সে?
আমিও তো তাঁর পূর্বপুরুষ, আমার চোখেও
পৃথিবীর যাবতীয় থিওরি- ডগমা
ঝুলে থেকেছিল কয়েককাল অথবা ঋতু-সমান
অতঃপর নাকি থেমে যেতে হয়- ধীমান,

এমনই নিয়মে

জানা হয়ে গেছে, ধীরে। কবিতার মৌল বিষয় কি হতে পারে
সুরমা মাছের দেশ- ‘যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি দ্বীপের ভেতর’
মাছ খাওয়া হয়ে গেছে, নদীগুলো সব শুকিয়েছে তারপর
চোখের কাছে, চোখের ভেতর সমুদয় বাজনা
কবিতার মৌল বিষয় হতে পারে- আর না
লেখা প্রকৃতি পরিচয়। এছাড়া, মানুষও একে একে বলে দিতে পারে
তাঁর হিস্ট্রি- জন্মবৃত্তান্ত, বৃক্ষবহুল একাধিক সিনেমার প্রেক্ষাপট
এবং সাহিত্য সমালোচনা।
কবিতার মৌল বিষয় হতে পারে, আর না
লেখা চোখের ভেতর সমুদয় বাজনা।

প্রকৃতি পরিচয় শুনি মানুষের কাছে, মানুষের একান্ত কথাগুলি
কেউ তো লিখুক
এসব লিখতে গিয়ে আমার লেখাও মাঝেমাঝে বেড়ে যায় অহেতুক-
মাঝেমাঝে মরেও যায়, চীৎকার ক’রে ডাকে- সাড়া পায় না
এসবও কবিতার মৌল বিষয়- যেমন, আর না
লেখা কিছুই।

জীবনানন্দ

আমাদের মানুষের জীবনানন্দ- এখন নাকি
কাক-চিল-শকুনের ক্যামোফ্লাজে বাহারি
রোদ্দুর আর ধানসিঁড়ি
নদীটির দিকে দুর্বল মনোযোগে হতেছে সংসারি?
এতদিন যেখানে ছিলেন- বনলতা সেন
দৃষ্টিতে বেঁধে রেখেছিলেন?


কবে, শুনিনি তো- কোথায়, তা-ও দেখেছি কি না
জারুল- আমরুলের- ছায়াতমসালীনা
মনে করতে পারছিনা
‘কবি’,- প্রাক্তন ও বৃদ্ধ
হতেছে ইদানীং, সদ্য- নানাবিধ স্বরে উদ্ধৃত


নির্জন নিরিবিলির একান্ত রাত্রিটি
জলপাইহাটি
যাওয়া হোক- লক্ষ্মীপেঁচার অনন্ত প্রহর
কাটতে না কাটতেই শাদা ফুটফুট মহীনের ঘোড়াগুলির ডিমের ভেতর
আমাদের মানুষের জীবনানন্দ- আমাদের ব্যক্তিগত কাজে
টের পাই- বোধ হয়ে- বসে থাকে বিষণ্ণ ক্যামোফ্লাজে-

মানুষ একটি আশ্চর্য রাইবোজোম

হোক প্রেমে পড়া শুভ তবু। বোধদয় হোক গাছের ফুলের, দেহের ঘ্রাণ
থেকে নেমে আসা প্রাণসঞ্চারক বীজ
তোমার জন্মেও কিছুটা মিলনাত্মক নাটিকার মত
অংক থেকে দৃশ্যে চরিত্রের নিজ নিজ
সাফল্যের সাথে সংঘর্ষ হতে পারে- তেমন কিছু একটা
গল্পের প্রাধান্য বহাল থাকুক।

বহাল থাকুক যাবতীয় অনুবাদ, কবিদের যার যার চর্চার মত করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ
এই পৃথিবীর বক্ষে আরেক যুদ্ধের লোভে গঙ্গাপূজা আর স্টেরয়েড সেবন চলুক (ক্ষমাপ্রার্থী হে স্নিগ্ধতা!)
ফুরিয়েছে জাতীয়তাবাদের প্রয়োজনীয়তা, নাকি? পৃথিবীর মানুষ আমরা- এর চাইতে বৃহৎ কোনো যোগ্যতা কারুর থেকে থাকলে
তা-ও সামনে পরিবেশিত হোক, রেকাবে যা যা পানীয় থাকে- তা-ই সমন্বিত
ভেতরে প্রবেশ করবার আগেই তৃষ্ণার্তা জেনে নিক
এখানে আগে এককালে গোলাগুলি হতো, মায়ের দেহ থেকে জোরপূর্বক মাইটোসিস আলাদা করে
ফেলবার মতো করে ছিনিয়ে নেয়া হতো শিশুমুখ
পিস্তল ঠেকিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা শস্যের ক্ষেত
অতীতে থাকা আলোর কণাগুলো বর্তমান হিসেবে পাবার তীব্র উত্তেজনা নিয়ে আমাদের ফ্রিডম ফ্রিডম খেলা

বর্তমানের আলোর কণা কতদূর কোথায় এখন? যাত্রাস্থল?
অদূরে নাকি? এসো ঘুরে আসা যাক একবার
পৌঁছুতে যতক্ষণ লাগে, দেখে নেয়া যাবে তীব্র পৃথিবীরূপ, আলোকচ্ছটা
এছাড়াও কার ক’টা
চরিত্র আছে- তাও শিখে নেয়া যাবে
মূসার লাঠি মূসাকে ছাড়া আর কারুকে দেয়া হয়নি তো, আর কারুকে
তবে কারা করে এইসব সমুদ্রবিভাজন, মানুষের দেহ থেকে শুরু করে গোত্রে বর্ডারে
পাখির খাবার, যোগজীকৃত ভূমি আর পশুর প্রহারে
কারাগার তৈরি করে দিয়ে কারাকারা দূর থেকে দরোজা নাড়ায়?

এইরূপ দর্শন আছে জানি, সহজ মানুষের
চিত্রকলায় বর্নিত হয়েছে অতীতের
জটিল ও কঠিন কাঠামো
বিবমিষা যুক্তও থাকে, ক্রমে- ছবির মতোই বহুবিধ ক্রোধ তৈরি হতে থাকে
বহু নকল হাতে হাতে ঘোরে, আদি ও আসল
কথাগুলি মাদকের মতই গন্তব্য বর্জিত।

পাখির মৃত্যুতে কারুর কিছু যায় আসে নাকি? কে কোথায় কবে দুঃখে পেয়েছে- শুনিনি তো
মানুষও পাখির মত হতে চায় শুনে- আলগোছে ধরে রাখা শ্বাস ধীরে ফেলি, নিজের শরীরেই এসে বিঁধে বহুবিধ হিপোক্রিট শ্বাস।

অলংকরণ: আল নোমানের চিত্রকর্ম অবলম্বনে মীর রবি

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে