পবিত্র ঈদুল ফিতরে জাতীয় ঈদগাহের জামাতে মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ, প্রয়োজনে ছাতা নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
আজ সোমবার জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদগাহের ভেতরে চারপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকবে। পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে এগুলোর ফুটেজ মনিটরিং করা হবে।
এছাড়াও আগত মুসল্লিদের তিন ধাপে তল্লাশি করে ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেয়া হবে।
আছাদুজ্জামান মিয়া।বলেন, ঈদ জামাতে আগত মুসল্লিরা জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে আসতে পারবেন। এর বাইরে কোনো কিছু সঙ্গে নিয়ে আসা যাবে না। দাহ্য পদার্থ থেকে শুরু করে ব্যাগ, ছুরি-কাঁচি, ব্লেড সঙ্গে রাখা যাবে না। পুলিশ চাইলে জায়নামাজ ও ছাতা খুলে দেখাতে হবে। কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। ঈদ জামাতের চারদিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে।
কমিশনার বলেন, ঈদের জামাতের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। ঈদ জামাতকে ঘিরে কয়েক স্তুরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ডিএমপি। এর মধ্যে পোশাকধারী পুলিশ, সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ, সোয়াত, সিটিটিসি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, আর্চওয়ে ও সিসিটিভি মনিটরিং ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্য দিয়েই মুসল্লিদের ঈদ জামাতে প্রবেশ করতে হবে।
জাতীয় ঈদগাহের জামাতে সন্দেহজনক কোনো কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে জাতীয় ঈদ জামাত বাদেও অন্তত আরও কয়েকশ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেগুলোতেও সাধ্যমতো নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করবো। কোথাও কোথাও আর্চওয়ে না থাকলেও ফিজিক্যালি সার্চিং করা হবে।
সেক্ষেত্রে নাগরিকদের পুলিশকে সহায়তা করার আহ্বান জানান কমিশনার। তিনি বলেন, আমরা চাই নিরাপত্তার বিষয়ে নাগরিকরাও যাতে সচেতন থাকেন। কোথাও কিছু দেখলে তা যেন পুলিশ কন্ট্রোল রুম, ট্রিপল নাইন ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের অবহিত করেন। অতীতের নিরাপত্তার কথা আলোকেই এবারের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান কমিশনার।
ঈদ জামাতে প্রবেশে মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে জিরো পয়েন্ট, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল মোড়, মৎস্যভবন মোড় ও পল্টন মোড়ে ব্যারিকেড থাকবে। এসব রাস্তা দিয়ে ঈদগাহের দিকে পায়ে হেঁটে আসতে হবে। কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না বলে জানান কমিশনার।
ঈদের জামাতে কোনো হুমকি আছে কি না? এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, সুস্পষ্টভাবে নিরাপত্তার কোনো হুমকি নেই। আমরা রাতদিন কাজ করছি। নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় হামলার পর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা হুমকির যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সবসময় একটি গোষ্ঠী ভীতিসঞ্চার করার জন্য তৎপর রয়েছে। আমরাও সকল গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি।
সম্প্রতি গুলিস্তান ও খিলগাঁওয়ে পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, গুলিস্তান ও খিলগাঁওয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে যে হামলা চালানো হয়েছে তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তথ্যপ্রমাণ যোগাড় করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজসহ ফিজিক্যাল এভিডেন্স সংগ্রহ করা হয়েছে। সিটিটিসির চৌকস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তদন্ত করছে। আশা করছি, কী কাজে কারা হামলা করেছে তা বেরিয়ে আসবে। আর দুই-একজন পুলিশের ওপর এরকম চোরাগুপ্তা হামলা করে সোয়া দুই লাখ পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়া যাবে না, এটা অতীতেও সম্ভব হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।