ইউক্রেন থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো বুথের টাকা তোলার প্রক্রিয়া

মহানগর প্রতিবেদক

এটিএমে জালিয়াতির ঘটনা
ছবি : সংগৃহিত

সাত বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অটোমেটেড টেলার মেশিনের (এটিএম) বুথ থেকে টাকা তুললেও পুরো প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রিত হতো তাদের নিজ দেশ ইউক্রেন থেকে।

সেখানকার নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা তোলার পরিকল্পনা করে ইউক্রেনের সাত নাগরিক ঢাকায় এসেছিলেন। বুথ থেকে টাকা তোলার সময় মোবাইলের আন্তর্জাতিক রোমিং সিম ব্যবহার করতেন তাঁরা। তবে আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশে কেউ জড়িত থাকতে পারেন।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন।

universel cardiac hospital

ইউক্রেনের সাত নাগরিকের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন দেনিস ভিতোমস্কি (২০), নাজারি ভজনোক (১৯), ভালেনতিন সোকোলোভস্কি (৩৭), সের্গেই উইক্রাইনেৎস (৩৩), শেভচুক আলেগ (৪৬) ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি (৩৭)। ভিতালি ক্লিমচুক (৩১) নামের আরেকজন পলাতক রয়েছেন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ইউক্রেনের জালিয়াত চক্রটি ডিসকাউন্ট কার্ড ব্যবহার করেছে পুরো নেটওয়ার্ক এখনো পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি। তারা এ দেশে নির্দিষ্ট বুথে ইউক্রেন থেকে কানেকটিভিটি তৈরি করে। এর পর ওই বুথের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। টেলিফোনের মাধ্যমে কানেকটিভি তৈরি করে কার্ড পাঞ্চ করা হতো। কার্ড পাঞ্চ করলে বুথের মধ্য থেকে টাকা আসত। জালিয়াত চক্রটি ইউক্রেনের মোবাইল সিম রোমিং করে যোগাযোগ করত। তারা একটি ডিসকাউন্ট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম বুথ থেকে টাকা বের করে আনত।

বিদেশি চক্রটির সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কেউ জড়িত নেই—এটা অবশ্যই বলা যাবে না। বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কিনা এটা সন্দেহের মধ্যে অবশ্যই রয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে যে মেশিনটা ব্যবহার করা হয়, সেই এনআরসি করপোরেশনের মেশিন ও সফটওয়্যার পুরো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে ৮ দিনের ভ্রমণ ভিসায় সাত বিদেশি বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের পর ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভারতে গিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার ইউক্রেনের নাগরিকদের কাছে ইসরায়েলের ব্যাংকের একটি ক্রেডিট কার্ড পাওয়া গেছে। একজন ইউক্রেনীয় নাগরিক হয়ে কেন ইসরায়েলি ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করতেন তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে যারা এসেছে তারা হয়তো কর্মী হতে পারেন। এরা তথ্যপ্রযুক্তিতে খুব দক্ষ না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইংরেজি ভাষায় কথাও বলতে পারেন না।

উল্লেখ্য, ইউক্রেনের সাত নাগরিক গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তুর্কি এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে ইউক্রেন থেকে ইস্তাম্বুল হয়ে বাংলাদেশে আসেন। ৬ জুন তাঁদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। গ্রেপ্তার ছয়জনসহ আরও একজনের বিরুদ্ধে খিলগাঁও মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ৫০টির মতো কার্ড পাওয়া গেছে, যার অধিকাংশতেই ‘ডিসকাউন্ট’ লেখা। তাঁদের কাছ থেকে মুখোশ, টুপি, সানগ্লাস, ছয়টি মুঠোফোন এবং একটি আইপ্যাড জব্দ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে