উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঈদুল ফিতরের জামাতকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা। পর্যবেক্ষণে থাকছে ড্রোন ক্যামেরা। এছাড়া এবারই প্রথম স্নাইপার রাইফেল হাতে পাহারা দেবেন র্যাব সদস্যরা।
শোলাকিয়ায় ১৯২তম ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। দূরের মুসল্লিদের জন্য থাকছে দুটি বিশেষ ট্রেন।
ঈদগাহ মাঠের লাইন টানা, দেয়ালে চুনকাম, ওজুখানা মেরামতসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ঈদের নামায আদায় করতে দূরের মুসল্লিদের অনেকেই চলে আসেন ঈদের আগেই। তাদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ঈদগাহ কমিটি।
২০১৬ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হবে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি। নিরাপত্তার স্বার্থে জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে নিতে পারবেন না মুসল্লিরা।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ঈদের দিন শুধুমাত্র জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে নিয়ে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না।
তিনি জানান, মাঠের সাধারণ প্রস্তুতি ছাড়াও দফায় দফায় সভা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। র্যাব-পুলিশ ছাড়াও পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে।
কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) জানান, ঈদগাহের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগগাহ ময়দান ও এর আশপাশ এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হবে। মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ আদায় শেষে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন। পুলিশের ৩২টি নিরাপত্তা চৌকি ছাড়াও ২৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকছে স্ট্রাইকিং ফোর্স। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ পথে মুসল্লিদের কয়েক দফায় তল্লাশীর মুখে পড়তে হবে। ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশের আকাশে নজরদারি করবে শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা। নামাজের আড়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুরো মাঠ সুইপিং করা হবে।
- আরও পড়ুন >> দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
পুলিশ সুপার আরও জানান, বহিরাগত কিংবা অপরিচিত কোনো লোক যাতে ঈদের সময় আত্মগোপন করতে না পারে, সে লক্ষ্যে শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও মেসে প্রতিদিন তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। নতুন কোনো ভাড়াটে উঠলে তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানাতে বাড়ির মালিকদের বলা হচ্ছে। এটি মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে।
র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ এফতেখার উদ্দিন বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাবের শতাধিক চৌকস সদস্য।
গত ৩১ মে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতের নিরাপত্তায় অন্যান্য বাহিনীর মতো সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে এলিটফোর্স র্যাব। ঈদের জামাতকে নির্বিঘ্ন করতে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাবের শতাধিক সদস্য সক্রিয় থাকবে। এদিকে এবারই প্রথমবারের মতো র্যাবের নিরাপত্তা বহরে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল। মাঠের চারপাশে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। পোশাকি নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে মাঠের ভেতরে-বাইরে গোয়েন্দা নজরদারি। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করা হবে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে- এমনটা ধরে নিয়েই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
এ দিকে দূরের মুসুল্লিদের জন্য শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দু’টি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করছে রেলওয়ে। সকাল ৫টা ৫৫মিনিটে একটি ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে ৯টা ৫ মিনিটে। অপর ট্রেনটি জেলার ভৈরব থেকে ছেড়ে আসবে ভোর ৬টায়। কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে সকাল ৯টায়। জামাত শেষ হওয়ার পর দুটি ট্রেনই গন্তব্যে ফিরে যাবে দুপুর ১২টায়।