পাসপোর্ট না নেওয়া জীবনের বড় ভুল : ক্যাপ্টেন ফজল

বিশেষ প্রতিবেদক

বিমান
ফাইল ছবি

ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীকে আনতে পাসপোর্ট ছাড়াই বিমান নিয়ে কাতারে যাওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ঘটনা তার পেশাগত জীবনের বড় ভুল।

একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, দোহার হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন তাকে আটক করেনি। পাসপোর্ট সঙ্গে নেই বুঝতে পেরে তিনি ইমগ্রেশনে না গিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে অরিক্স এয়ারপোর্ট হোটেলে ওঠেন।

universel cardiac hospital

আজ শুক্রবার দোহা থেকে টেলিফোনে সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান ফজল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট যাওয়ার পর ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে তার জন্য বিমানের নির্ধারিত হোটেলে যান। এখন সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।

কাতার ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে পাসপোর্টের বিষয়ে তার কাছে কিছু জানতে চাওয়া  কিংবা কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বলেও দাবি করেন ফজল মাহমুদ।

প্রধানমন্ত্রীকে আনতে ফ্লাইট নিয়ে দোহা যাওয়া পাইলটের পাসপোর্ট না থাকায় তাকে সেখানকার বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন আটকে দেওয়ার খবর প্রকাশ পায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

এদিকে পাসপোর্ট ছাড়া কাতার গিয়ে পাইলট আটক হওয়ার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পাসপোর্ট ছাড়া কীভাবে পাইলট শাহজালাল বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পার হলেন তা তদন্তে  কমিটি গঠন করেছে।

গত বুধবার (৫ জুন) রাতে বাংলাদেশ বিমানের ড্রিম লাইনার উড়োজাহাজ নিয়ে ঢাকা থেকে দোহায় যান ফজল মাহমুদ। সরকারি সফরে বর্তমানে ফিনল্যান্ডে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দোহা হয়ে এই বিমানে দেশে ফেরার কথা। ফ্লাইটটি পরিচালনার কথা ছিল ফজল মাহমুদের।

ফজল মাহমুদ জানান, দোহা রওনা হওয়ার সময় ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে তার দুই আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। কিন্তু পাসপোর্ট দেখতে চাওয়া হয়নি।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে পাইলট, কেবিন ক্রুদের পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ, গন্তব্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্যসহ জেনারেল ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হয়। তাদের ব্যক্তিগত পাসপোর্ট অবশ্যই সঙ্গে নিতে হয়। ফজল মাহমুদ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন কি না তা জানাতে পারেনি সূত্র।

ফজল মাহমুদ জানান, দোহা বিমানবন্দরে পৌঁছে অফিসিয়াল ব্যাগে পাসপোর্ট না পেয়ে তিনি ওই এয়ারপোর্টে বিমানের স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ঢাকায় বিমান অফিসেও কথা বলেন। তখন লকারে তার ব্যক্তিগত ছোট ব্যাগে পাসপোর্ট রয়েছে বলে জানতে পারেন।

এ অবস্থায় তিনি ইমগ্রেশনে যাননি দাবি করে অজল মাহমুদ বলেন, বিমানবন্দরের ভেতরে অরিক্স এয়ারপোর্ট হোটেলে ওঠেন। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো পাসপোর্ট পেয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন।

পাসপোর্ট না নিয়ে যাওয়ার ঘটনা তার পেশাগত জীবনের বড় ভুল বলে জানান ফজল মাহমুদ। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে বিমানের পাইলট হিসেবে ফ্লাইট পরিচালনা করছেন। ভিভিআইপি বিমানও পরিচালনা করেন তিনি।

পাসপোর্ট ছাড়া তিনি কীভাবে অরিক্স এয়ারপোর্ট হোটেলে উঠলেন- এ ব্যাপারে ফজল মাহমুদ বলেন, পাসপোর্টবিহীন যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ফিরতি ফ্লাইটেই তুলে দেয়। এর আগে ইমিগ্রেশনের নির্ধারিত এলাকায় তাকে অবস্থান করতে হয়।

ফজল মাহমুদের এ অনিয়মের কারণে তাকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট পরিচালনা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে আনতে বিমানের জ্যেষ্ঠ পাইলট ক্যাপ্টেন আমিনুল আমিনুল ইসলামকে দোহা পাঠানো হয়েছে।

ফজল মাহমুদ দেশে এলে তার বিরুদ্ধে বিমান কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে বলে ইঙ্গত দিয়েছেন বিমান সচিব মো. মহিবুল হক।

পাসপোর্ট ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিমান নিয়ে কাতার যাওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আজ একটি আন্তঃ মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদসহ পাসপোর্টবিহীন বিমানে ভ্রমণ এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমকে।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ-সচিবের কাছে জমা দিতে হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে