আরও চার জেলায় উচ্ছেদ অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার

ফাইল ছবি

নদী উদ্ধারে দেশব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার অংশ হিসেবে আরও চার জেলায় অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। যশোর, খুলনা, বরিশাল ও চাঁদপুর জেলার নদী অবৈধ দখলদার মুক্ত করা হবে এই অভিযানে। ইতিমধ্যে অভিযানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

রূপসা, ভৈরব, কীর্তনখোলা, মেঘনা, পদ্মা, ডাকাতিয়া, গোমতী, ধনাগোদা, উধামধি, চারাতভোগ নদীসহ চার জেলার সব নদীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে এই অভিযানে। সেই সঙ্গে নদীর নাব্য ফিরিয়ে দিতে ড্রেজিংসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনাও আছে বিআইডব্লিউটিএর।

অভিযান পূর্ববর্তী সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন।

এদিকে ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। ঈদের ছুটিতে কয়েক দিনের জন্য স্থগিত থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় এ অভিযান শুরু হবে। উচ্ছেদ বন্ধ থাকলেও অব্যাহত রয়েছে নদীর ড্রেজিং কাজ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, ঈদের আগে ঢাকা নদীবন্দর এলাকার ফতুল্লা অংশে দুই দিন এবং মেঘনা নদীতে ঈদের আগ পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত ছিল। উচ্ছেদ অভিযানকে একটি চলমান প্রক্রিয়া আখ্যা দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ জানায়, নদীর সে অংশ দখল হয়েছে তা উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে দখলমুক্ত করা হয়েছে ঢাকা নদীবন্দরের আওতাধীন তুরাগ ও বালু নদীর তীরভূমি। তিন পর্যায়ে মোট ৩৬ কার্যদিবসে উচ্ছেদ হয়েছে তিন হাজার ৫৭৫টি অবৈধ স্থাপনা।

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের অভিযানে নদী তীরভূমি দখল করে গড়ে তোলা ৫৩১টি পাকা ভবন, ৫৯৮টি আধা পাকা ভবন, ২৪৭টি সীমানা দেয়ালসহ ছোট-বড় মিলিয়ে মোট তিন হাজার ৫৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে নদীর ৯১ একর জায়গা অবমুক্ত করা হয়েছে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিএ।

এ ছাড়া জরিমানার মাধ্যমে আদায় হয়েছে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। উচ্ছেদকৃত মালামাল নিলামে বিক্রি করে আরও পাঁচ কোটি দুই লাখ ২৬ হাজার টাকা আদায়ের কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক। অভিযানে বাধা প্রদান, অবৈধভাবে নদী দখলের কারণে ২২ জনকে আসামি করে ছয়টি মামলাও দায়ের করেছে সংস্থাটি।

এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর খোলামোড়া ঘাট এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও নদীর কিছু অংশে এখনো উচ্ছেদ বাকি রয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর সিংহভাগ দখলমুক্ত হলেও নদীর বাদামতলী, শ্যামপুর, শ্যামবাজার অংশে এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি। কিছু দিনের মধ্যে বুড়িগঙ্গার এ অংশেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আশা করা হচ্ছে, পাঁচ থেকে ছয় কার্যদিবসে নদীর এ অংশটিকে দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে নদীর উচ্ছেদকৃত  অংশে চলছে ড্রেজিং কাজ। আর এই কাজ শেষ হলেই নদীর সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য বাসানো হবে সীমানা খুঁটি। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের মতে প্রতিটি খুঁটি প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে দশ হাজার সীমানা খুঁটি বসানো হবে। যা একশ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে।

পরিচালিত অভিযানের পর তীরভূমি সংস্কার করে নদীর নাব্য ফিরিয়ে দিতে ড্রেজিংয়ের কথা জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। নদী তীরভূমি অংশকে সংরক্ষণ এবং ঢাকাবাসীর জন্য নদীকে বিনোদনের জায়গা হিসেবে পরিচিত করতে ৮৫০ কোটি টাকার ব্যয়ের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়। যার মধ্যে নদীর পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সবুজায়ন, লাইটিং এবং ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণের কথা রয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে