সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে জোটের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে জোটটির নেতারা। ঐক্যফ্রন্টের এই যোগাযোগে সরকারবিরোধী দলগুলো ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক দলের নেতা এমন তথ্যই দিয়েছেন।
সোমবার জোটটির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে আ স ম রব বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সভা করবো। এই আন্দোলনের রূপ হবে বৃহত্তর ঐক্য। ঐক্যফ্রন্টকে আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারবিরোধী যত রাজনৈতিক দল আছে, সেসব দলকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।
এদিকে সরকারবিরোধী দলগুলোর নেতারা বলছেন, আনুষ্ঠানিভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে জোটে যাওয়া বা রাজপথে কর্মসূচি ভিত্তিক জোট গঠন করার প্রস্তাব এখনও দেওয়া হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। সে ক্ষেত্রে নূন্যতম কর্মসূচির বা দাবির প্রেক্ষিতে জোট হতে পারে।
দলগুলোর নেতারা আরও জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচন, নিরপেক্ষ সরকার অধীনে নির্বাচন, ভোটাধিকারের দাবিতে সরকারবিরোধী দাবিগুলোতে সবাই একমত। এসব বিষয়ে সবাই আন্দোলনে যেতেও প্রস্তুত। তবে সে ক্ষেত্রে সবাইকে একটি জোট গঠন করে আন্দোলন করতে হবে, এই রকম কোনও কথা নেই। যার যার জোট ও দল ঠিক রেখেও নূন্যতম দাবির প্রেক্ষিতে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেও ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব। আন্দোলন করতে গিয়ে সব দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মিলে গেলে তখন সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য হতেই পারে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাবেক সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, রমজানে নাগরিক ঐক্যের ও গণফোরামের ইফতারিতে গিয়েছি। সেখানে অনেকের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক বিষয়ে কথা-বার্তা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনের তামাশার সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের ও ভোটাধিকার দাবিতে বাম জোট গণশুনানিও করেছে। এসব দাবিতে আমাদের জোট ধারাবাহিক আন্দোলনে আছে। আমরা অন্যদের বলেছি রাজপথে নামেন। বর্তমান দুঃশাসন মোকাবিলায় সমস্ত গণতান্ত্রিক অংশের রাজপথে নামা এখন সময়ের দাবি। সে ক্ষেত্রে যার যার জোট ও দল ঠিক রেখেও রাজপথে আন্দোলনের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব। আর রাজপথের ঐক্য গড়ে উঠলে জনগণ আস্থার একটা জায়গা পাবে। তারাও রাস্তায় নামতে পারে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এককভাবে তিনশ’ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে যাওয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবে রমজান ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতারা সঙ্গে।
সারাদেশে নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করতে ইসলামী আন্দোলন কাজ করছে জানিয়ে ইউনুছ বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ যদি উদ্যোগ নেয় জোট গঠনের, তখন আমরা কয়েকটি বিষয় বিশ্লেষণ ও গবেষণা করবো। তার মধ্যে জোট বা আন্দোলনের ধরন, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী হবে। কারণ বাংলাদেশে অনেক আন্দোলন ব্যর্থ হয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য না থাকার কারণে। এরপর আমাদের দলের মজলিশে শুরার মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেবো। তারপর বলতে পারবো আমরা কোনও জোটে যাবো কিনা।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আনুষ্ঠানিভাবে আমরা এখনও কোনও প্রস্তাব পাইনি। অনানুষ্ঠানিকভাবেতো বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা হয়। এছাড়া আমরা তো পুনর্নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে আছি। এখন তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রস্তাব পেলে, বিষয়টি বিবেচনা করবো।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সবাইকে একটি জায়গায় ঐক্যবদ্ধ করার জন্য অনেকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমি নিজেও বাম জোটগুলোর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তবে ঈদের পরে কোনও দলের সঙ্গে ওইভাবে কথা হয়নি। আরও একটু অপেক্ষা করুন, ভালো কিছু দেখতে পাবেন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আগামী মিটিংয়ে ড. কামাল হোসেন উপস্থিত থাকবেন। সেখানে এই বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এককভাবে কোনও দলের পক্ষে আন্দোলন করে সফল হওয়া সম্ভব নয়। কারণ বর্তমান সরকার গত কয়েক বছর ধরে যেকোনও আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে প্রশাসনিকভাবে সামাল দিচ্ছে। ফলে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হতে হলে সব দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে। এই কারণে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৩০ তারিখ নির্বাচনের পরে অনেকেই হোঁচট খেয়েছে। সবাই সেটা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় নিচ্ছে। আমাদের রাজপথের বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সফল হবো বলেও আশা করি। কারণ এককভাবে আন্দোলন করে এই সরকারের বিরুদ্ধে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচন ও বর্তমান সরকার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিটি দলের মধ্যে অস্বস্তি আছে দাবি করে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, কিন্তু কেউ এককভাবে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ এই সরকার তাদের বিরোধীদের ওপর পুলিশ প্রশাসন দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে দেশের মানুষ ও নিজেদের স্বার্থেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ঐক্যফ্রন্টের কলেবর বৃদ্ধি একটা সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করে সুব্রত চৌধুরী বলেন, সেখানে সরকারের বাইরে যারা আছে, তাদের নূন্যতম দাবির প্রেক্ষিতে সবাইকে একটা জায়গায় ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।